Wednesday, August 3, 2016

Ziyarate Baitullah



 Ziyarate Baitullah/যিয়ারতে বাইতুল্লাহ






সূচীপত্র

১.       হজ্জ

২.       হজ্জ ফরয হওয়ার দলিল

৩.      হজ্জের শর্তবলী

৪.       হজ্জের প্রকারভেদ

৫.     ইফরাদ হজ্জ

৬.       কেরান হজ্জ

৭.      তামাত্তু হজ্জ

৮.      হজ্জের ফরয

৯.      হজ্জের ওয়াজিব

১০. হজ্জের সুন্নত

১১.  উমরা

১২.  উমরা করা সুন্নত না ওয়াজিব

১৩. উমরা কখন করা যায়

১৪.  উমরার মীকাত

১৫. উমরা আদায়ের পদ্ধতি

১৬.  উমরার ফজিলত

১৭. হজ্জের সফরে একাধিক উমরা

১৮. অন্যান্য সময়ে একাধিক বার উমরা করা প্রসঙ্গে

১৯.  মীকাত

২০.  ইহরাম

২১.  নিয়ত

২২. তালবিয়াহ

২৩. ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ

২৪. ইহরামরত অবস্থায় বৈধ কাজসমূহ

২৫. তাওয়াফের বিবরণ

২৬.  তাওয়াফের শর্তসমূহ

২৭. তাওয়াফের ওয়াজিবসমূহ

২৮. তাওয়াফের সুন্নাত কার্যাবলী

২৯.   তাওয়াফ করার পদ্ধতি

৩০.      নারীর তাওয়াফ

৩১.   হাজারে আসওয়াদ ও রুক্নে ইয়ামেনী স্পর্শ করার ফযীলত

৩২. সাঈ করা

৩৩.     যমযম, যমযমের পানি পান করার আদব

৩৪.   মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা

৩৫. তাওয়াফে যিয়ারত

৩৬. মিনায় রাত্রিযাপন

৩৭.    ১১, ১২, ও ১৩ জিলহজ্জ কঙ্কর নিক্ষেপ প্রসঙ্গ

৩৮.    বিদায়ি তাওয়াফ, বিদায়ি তাওয়াফের নিয়ম

৩৯. হজ্জের ধারাবহিক কাজ

৪০. মক্কা শরীফে দোয়া কবূলের স্থানসমূহ

৪১.  যিয়ারতে মদিনা

৪২.  মক্কা মুকাররামাতে যিয়ারতের স্থানসমূহ

৪৩. মদীনা মুনাওয়ারা যিয়ারতের স্থানসমূহ

৪৪.  বাড়ি প্রত্যাবর্তনের আদব প্রসঙ্গ

৪৫. এলাকাবসীর করণীয়





হজ্জ



হজ্জ ইসলামের একটি অন্যতম বুনিয়াদ। ইসলামী ইবাদতসমূহের মধ্যে হজ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হজ্জের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত উল্লেখ করেছেন। হজ্জ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরীয়াতের নিয়ম অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে (যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত) কা’বা শরীফ ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ যিয়ারত করাকে হজ্জ বলা হয়।



হজ্জ ফরয হওয়ার দলিল



হজ্জ হল ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

‘এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)।

হাদিসে এসেছে—

عن عبد الله بن عمر- رضى الله عنهما- أن النبي- صلى الله عليه وسلم- قال: بني الإسلام على خمس : شهادة أن لا إله إلا الله، وأن محمدا رسول الله ، وإقام الصلاة، وإيتاء الزكاة، والحج، وصوم رمضان.

অর্থাৎ: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন : ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত (১) এ কথার ঘোষণা দেয়া যে আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন ইলাহ নেই এবং মোহাম্মদ স. আল্লাহর রাসূল (২) সালাত কায়েম করা (৩) জাকাত আদায় করা (৪) হজ্জ করা (৫) রমজানে সিয়াম পালন করা। (বোখারি, মুসলিম)



নবী কারীম (ﷺ) আরো বলেছেন : يا أيها الناس قد فرض عليكم الحج فحجوا

অর্থাৎ: হে লোক সকল! আল্লাহ তা’আলা তোমদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন, কাজেই তোমরা হজ্জ সম্পাদন কর । (মুসলিম)



হজ্জ জীবনে একবার করা ফরজ। হাদিসে এসেছে :—

عن ابن عباس: أن الأقرع بن حابس- رضى الله عنه- سأل النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله،  الحج كل سنة أو مرة واحدة ؟  قال : بل مرة واحدة، فمن زاد فهو تطوع.

অর্থাৎ: ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত সাহাবি আকরা ইবনে হাবিছ রা. রাসূলে কারীম (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল ! হজ্জ কি প্রতি বছর না মাত্র একবার ? তিনি বললেন : হজ্জ মাত্র একবার করা ফরজ। সুতরাং যে একাধিক হজ্জ করল তা নফল হিসেবে গৃহীত। (আবু দাউদ-১৭২১)

নবী কারীম (ﷺ) এ দুটি মর্যাদাপূর্ণ এবাদতের জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। এ দুটি এবাদতে রয়েছে পাপের কুফল থেকে আত্মার পবিত্রতা, যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় ও সম্মানিত হতে পারে। তাই নবী কারীম (ﷺ) বলেছেন :—

)من حج فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه(

অর্থাৎ: ‘যে ব্যক্তি হজ্জ করেছে, তাতে কোন অশ্লীল আচরণ করেনি ও কোন পাপে লিপ্ত হয়নি সে যেন সেই দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে গেল যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছে।’ (বোখারি, মুসলিম)



অতএব হজ্জ হল সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর জীবনে একবার ফরজ।















হজ্জের শর্তবলী



নিম্ন বর্ণিত শর্তগুলোর সবকটি পূরণ হলে হজ্জ ফরয হয়:

(১) মুসলমান হওয়া (অমুসলিম অবস্থায় কোন ইবাদাত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না)।

(২) বালেগ/বালেগাহ হওয়া।

(৩) সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন হওয়া (অজ্ঞান ও পাগলের কোন ইবাদাত হয় না)।

(৪) স্বাধীন হওয়া।

(৫) আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা থাকা। আর্থিক সক্ষমতার অর্থ হলো হজ্জের খরচ বহন করার পর তার পরিবারের ভরণপোষণ চালিয়ে যাওয়ার মত সম্পদ ও সক্ষমতা থাকতে হবে। শারীরিক সুস্থতার সাথে তার যানবাহনের সুবিধা, পথের নিরাপত্তা এবং মহিলা হলে তার সাথে মাহ্রাম পুরুষ থাকা সক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। এর কোন একটির ব্যত্যয় ঘটলে হজ্জ ফরয হবে না।



হজ্জের প্রকারভেদ

হজ্জ তিন প্রকার:

ক. ইফরাদ

খ. ক্বিরান

গ. তামাত্তু



ইফরাদ হজ্জ

হজ্জেরমাসগুলোয় উমরা না করে শুধু হজ্জ করাকে ইফরাদ হজ্জ বলে। এ ক্ষেত্রে মীকাত থেকে শুধু হজ্জেরনিয়তে ইহরাম বাঁধতে হয়। মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম (আগমনি তাওয়াফ) করা। ইচ্ছা হলে এ তাওয়াফের পর সাঈও করা যায়। সে ক্ষেত্রে হজ্জেরফরজ-তাওয়াফের পর আর সাঈ করতে হবে না। তাওয়াফে কুদুমের পর ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। ৮ জিলহজ্জ একই এহরামে হজ্জের কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মিনার দিকে রওয়ানা হওয়া। ইফরাদ হজ্জকারীকে হাদী (পশু) জবেহ করার বাধ্য বাধকতা নেই। তাই ১০ জিলহজ্জ কঙ্কর নিক্ষেপের পর মাথা মুণ্ডন করে ইফরাদ হজ্জকারী প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যেতে পারে।



ক্বিরান হজ্জ

উমরার সাথে যুক্ত করে একই ইহরামে উমরা ও হজ্জ আদায় করাকে ক্বিরান হজ্জ বলে। ক্বিরান হজ্জ দু’ভাবে আদায় করা যায়।

(১) মীকাত থেকে ইহরাম বাধার সময় হজ্জ ও উমরা উভয়টার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধা। মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরা আদায় করা ও ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা। হজ্জের সময় হলে একই ইহরামে মিনা-আরাফায় গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।

(২) মীকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা। পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর উমরার তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে হজ্জের নিয়ত উমরার সাথে যুক্ত করে নেয়া। উমরার তাওয়াফ-সাঈ শেষ করে, ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকা ও ৮ জিলহজ্জ একই ইহরামে মিনায় গমন ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পাদন করা।



তামাত্তু হজ্জ

শাওয়াল, যিলকদ ও জিলহজ্জ এ তিনটি হল হজ্জেরমাস। হজ্জেরমাসসমূহে পৃথকভাবে প্রথমে উমরা ও পরে হজ্জ আদায় করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে। অর্থাৎ ১ লা শাওয়াল থেকে উকুফে আরাফার পূর্বে (৯ জিলহজ্জ), যেকোনো মুহূর্তে উমরা আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া ও উকুফে আরাফার পূর্বে নতুন করে হজ্জের ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা। যারা হাদী সঙ্গে করে মক্কায় গমন করে না, বর্তমানে বহিরাগত হাজীদের কেউই কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে আসে না, তাই তাদের জন্য তামাত্তু হজ্জই উত্তম। কারও কারও মতে সর্বাবস্থায় তামাত্তু হজ্জ উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিদায় হজ্জের সময় তাঁর সঙ্গে থাকা সাহাবাদের মধ্যে যারা কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে আসেননি তাদের সবাইকে তামাত্তু করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং নিজেও এই বলে কামনা ব্যক্ত করেছেন যে, যদি এ বিষয়টি পূর্বে প্রতীয়মান হত তাহলে কুরবানীর পশু সঙ্গে আনতাম না, আর যদি কুরবানীর পশু আমার সাথে না থাকত, তবে হালাল হয়ে যেতাম (বুখারি)।



তামাত্তু হজ্জ তিনভাবে আদায় করা যায়

ক) মীকাত থেকে উমরার জন্য ইহরাম বেঁধে মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ ও সাঈ করে মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছোট করে হালাল হয়ে যাওয়া ও হজ্জ পর্যন্ত মক্কাতেই অবস্থান করা। ৮ জিলহজ্জ নতুনভাবে হজ্জের ইহরাম বেঁধে হজ্জের কার্যক্রম সম্পাদন করা।

খ) মীকাত থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কা গমন করা ও উমরার কার্যক্রম-তাওয়াফ, সাঈ, হলক-কসর সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। হজ্জের পূর্বেই যিয়ারতে মদিনা সেরে নেয়া ও মদিনা থেকে মক্কায় আসার পথে আবয়ারে আলী নামক জায়গা থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা। উমরা আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া এবং ৮ জিলহজ্জ হজ্জের জন্য নতুনভাবে ইহরাম বেঁধে হজ্জ আদায় করা।

গ) ইহরাম না বেঁধে সরাসরি মদিনা গমন করা। যিয়ারতে মদিনা শেষ করে মক্কায় আসার পথে আবয়ারে আলী নামক জায়গা থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা ও মক্কায় এসে তাওয়াফ, সাঈ, হলক-কসর করে হালাল হয়ে যাওয়া এবং ৮ জিলহজ্জ হজ্জের জন্য নতুন করে ইহরাম বাঁধা।



হজ্জের রুকন/ফরয



হজ্জের রুকন/ফরয সমূহ:

হজ্জের ফরয ৩টি, যথা:

(১) ইহরাম বাঁধা (অর্থাৎ মীকাত থেকে ইহরামের কাপড় পরে হজ্জের নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করা)।

(২) ৯ই যিলহজ্জ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।

(৩) তাওয়াফে যিয়ারাত করা (অর্থাৎ ১০ই যিলহজ্জ কাবাঘর তাওয়াফ করা, এদিন না পারলে ১১ বা ১২ তারিখেও করতে পারবেন এবং তৎসঙ্গে সাঈও করবেন। এর অপর নাম তাওয়াফে কুদুম)।

উল্লেখ্য যে, হজ্জের ফরযগুলোর কোন একটি ছুটে গেলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।



হজ্জের ওয়াজিব



হজ্জের ওয়াজিব সমূহ হল:

(১) সাঈ করা (সাফা ও মারওয়ার মাঝে দ্রুত চলা)।

(২) ইহরাম বাঁধার কাজটি মীকাত পার হওয়ার পূর্বেই সম্পন্ন করা।

(৩) আরাফাতে অবস্থান সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা।

(৪) আরাফাত হতে ফেরার পথে রাতে মুযদালিফায় অবস্থান এবং সেখানে মাগরিব ও এশার সালাত একসঙ্গে আদায় করা।

(৫) মুযদালিফার পর কমপক্ষে দুই রাত্রি মিনায় যাপন করা।

(৬) কঙ্কর নিক্ষেপ করা (১০, ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্জ পর্যন্ত)।

(৭) কুরবানী করা (তামাত্তু ও কেরান হাজীদের জন্য)।

(৮) পুরুষদের মাথা মুন্ডন বা চুল কাটা (মহিলাদের চুলের অগ্রভাগ কাটা)।

(৯) বিদায়ী তাওয়াফ করা।



উল্লেখ্য যে কোন কারণেই হোক উপরে বর্ণিত কোন একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে দম (অর্থাৎ পশু জবাই) দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।

হজ্জের সুন্নত



হজ্জের সুন্নত অনেক, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল (১) ইহরামের পূর্বে গোসল করা (২) পুরুষদের সাদা রঙের ইহরামের কাপড় পরিধান করা। (৩) তালবিয়াহ পাঠ করা (৪) ৮ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা (৫) ছোট ও মধ্যম জামারায় কংকর নিক্ষেপের পর দু‘আ করা (৬) কেরান ও ইফরাদ হাজীদের তাওয়াফে কুদূম করা।



উমরা

উমরা আবরী শব্দ, অর্থ যিয়ারত করা, ভ্রমণ করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জের নির্দিষ্ট দিনগুলো ব্যতীত মীকাত হতে ইহরাম বেঁধে কাবা শরীফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ায় সাঈ করাকে উমরা বলা হয়।

উমরার ফরয দু’টি:

১. ইহরাম

২. তাওয়াফ



উমরার ওয়াজিব দু’টি:

১.      সাঈ

২. মাথা মুন্ডন করা বা চুল ছোট করা।



উমরা করা সুন্নত না ওয়াজিব

পবিত্র কুরআনে হজ্জ ও উমরা উভয়টির কথা এসেছে। উমরা শুরু করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। তবে উমরা করার হুকুম কি? তা কি ওয়াজিব না সুন্নত ? এ বিষয়ে দু’টি মত রয়েছে।

ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্মল (রহ.)  এর নিকট উমরা করা ওয়াজিব।

প্রমাণ: পবিত্র কুরআনের বাণী ‘ وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ ‘তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর’ (সূরা আল বাকারা:১৯২)। এই অভিমতের পক্ষে বেশ কিছু হাদিসও রয়েছে তন্মধ্যে কয়েকটি হল নিুরূপ:

যেমন হাদিসে এসেছে :—

الإسلام: أن تشهد أن لا إله إلا الله، وأن محمدا رسول الله، وأن تقيم الصلاة، وتؤتي الزكاة، وتحج، وتعتمر، وتغتسل من الجنابة، وأن تتم الوضوء، وتصوم رمضان.

‘ইসলাম হল এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মাবুদ নেই ও মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল। সালাত কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে, হজ্জ ও উমরা আদায় করবে এবং জানাবাতের (সহবাস, স্বপ্নদোষ, বীর্যপাত ইত্যাদির) পর গোসল করবে, পরিপূর্ণরূপে ওজু করবে ও সিয়াম পালন করবে (ইবনে খুযাইমা, হাদিসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ)।



এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে উমরা পালন করা ওয়াজিব।

অণ্য হাদিসে এসেছে—

عن عائشة- رضى الله عنها- قالت: قلت يا رسول الله : على النساء جهاد؟ قال : نعم عليهن جهاد لا قتال فيه : الحج والعمرة. رواه



আয়েশা (ু) থেকে বর্ণিত- তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, নারীর ওপর কি জিহাদ ফরজ? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাদের ওপর জিহাদ আছে যে জিহাদে কিতাল (যুদ্ধ) নেই। আর তা হল হজ্জ ও উমরা (আহমদ : ২/১৬৫ ; ইবনে মাজাহ : হাদিস নং ২৯০১)।

এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মেয়েদের জন্য উমরা ওয়াজিব। যখন মেয়েদের জন্য উমরা ওয়াজিব হল তখন পুরুষদের জন্য তো অবশ্যই।

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর কাছে এসে বললেন আমার পিতা খুব বৃদ্ধ। তিনি হজ্জ-উমরা করতে অপারগ, এমনকি সফরও করতে পারেন না। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বললেন, ‘তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা পালন করো। (আবু দাউদ : হাদিস নং ১৮১০; তিরমিযী : হাদিস নং ৯৩০)।

কোনো কোনো বর্ণনায় হাদিসে জিব্রিলের একাংশে এসেছে (وأن تحج وتعتمر Ñতুমি হজ্জ করবে ও উমরা করবে) (ইবনে হিব্বান : হাদিস নং ১৭৩ ; দারা কুতনী : ২/২৮২)।

হাদিসে এসেছে, ‘হজ্জ ও উমরা দুটি ফরজ কর্ম। এতে কিছু যায় আসে না যে তুমি কোনটি দিয়ে শুরু করলে।’ (দারা কুতনী : হাদিস নং ২১৭)

 ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতানুসারে উমরা করা সুন্নত। প্রমাণ: জাবের (ু) থেকে বর্ণিত হাদিস: উমরা করা ওয়াজিব কি-না রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেছেন, না; তবে যদি উমরা করো তা হবে উত্তম (আহমদ, তিরমিযি )



উভয়পক্ষের দলিল পর্যালোচনা করলে বিশুদ্ধ মত হল উমরা করা ওয়াজিব।



উমরা কখন করা যায়

আরাফা দিবস ও ১০, ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ্জ এই পাঁচ দিন ব্যতীত বছরের বাকি দিনগুলোতে যে কোনো সময় উমরা আদায়ে কোনো সমস্যা নেই।



উমরার মীকাত

উমরাকারী যদি এই মীকাতের বাইরে থেকে আসে তাহলে মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে আসতে হবে (মুসলিম : হাদিস নং ১১৮১)। উমরাকারী যদি হেরেমের অভ্যন্তরে থাকে তাহলে হেরেম এর এরিয়া থেকে বাইরে যেতে হবে। হিল্ল থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে। সবচেয়ে নিকটবর্তী হিল্ল হল তানয়ীম, যেখানে বর্তমানে মসজিদে আয়েশা রয়েছে।

উমরা আদায়ের পদ্ধতি

তালবিয়া পাঠ অব্যাহত রেখে পবিত্র কাবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে। পবিত্র কাবার চার পাশে মাসজিদুল হারামের যে কোনো দরজায় প্রথমে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা যাবে। আল্লাহ যেন তাঁর রহমতের সকল দরজা খুলে দেন সে আকুতি নিয়ে মসজিদে প্রবেশের সময় সম্ভব হলে নীচের দোয়াটি পড়া।

بِسْمِ اللهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلى رَسُوْلِ اللهِ ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.

(উচ্চারণ: বিসমিল্লাহে ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফিরলি যুনুবী, ওয়াফতাহ্লি আবওয়াবা রাহমাতিক।)

অর্থ: আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ওপর। হে আল্লাহ আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের সকল দরজা উন্মুক্ত করে দিন।

এরপর তাওয়াফ শুরু করা। বায়তুল্লাহ শরীফ দেখামাত্র দু’হাত উঠানোর ব্যাপারে যে একটি কথা আছে তা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে বায়তুল্লাহ শরীফ দৃষ্টির আওতায় এলে দোয়া করার অনুমতি রয়েছে। ওমর (ু) যখন বায়তুল্লাহর দিকে তাকাতেন তখন নীচের দোয়াটি পড়তেন

اللّهُمَّ أنْتَ السَّلامُ وَمِنْكَ السَّلامُ فَحَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلامِ



(উচ্চারণ: আল্লাহম্মা আনতাস্ সালাম ওয়া মিনকাস্ সালাম ফাহায়্যিনা রাব্বানা বিস্সালাম)



যথার্থভাবে তাওয়াফ সম্পন্ন করার জন্য নিুবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখা

  



দ্ব ছোট-বড় সকল প্রকার নাপাকি থেকে পবিত্র হয়ে তাওয়াফ করা।

দ্ব প্রতিবার তাওয়াফের শুরুতে মনে মনে নিয়ত করা। এ ক্ষেত্রে সাধারণভাবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেই চলবে। বিভিন্ন পুস্তকে তাওয়াফের যে নিয়ত লেখা আছে তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

দ্ব সতর ঢাকা অবস্থায় তাওয়াফ করা।

দ্ব হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম (চুম্বন-স্পর্শ) অথবা ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা এবং হাজরে আসওয়াদ বরাবর এসে তাওয়াফ শেষ করা।

দ্ব হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করতে না পারলে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র ডান হাত উঠিয়ে ইশারা করা ও বলা بِسْمِ اللهِ اللهُ أَكْبَرُ (উচ্চারণ: বিসমিল্লাহে আল্লাহু আকবার) অর্থ: আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, আল্লাহ মহান।

দ্ব হাতিমের বাইরে দিয়ে তাওয়াফ করা।

দ্ব হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে য়ামানি ব্যতীত কাবার অন্য কোনো অংশ তাওয়াফের সময় স্পর্শ না করা। হাঁ, তাওয়াফ শেষ হলে বা অন্য কোনো সময় মুলতাযামের জায়গায় হাত-বাহু-গণ্ডদেশ ও বক্ষ রাখা যেতে পারে।

দ্ব মাকামে ইব্রাহীম স্পর্শ না করা।

দ্ব পুরুষদের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব পবিত্র কাবার কাছ দিয়ে তাওয়াফ করা।

দ্ব  নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে একপাশ হয়ে তাওয়াফ করা।

দ্ব খুশুখুজুর সাথে তাওয়াফ করা ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলা।

দ্ব রুকনে য়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে নিুোক্ত দোয়া পড়া।

 رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

(উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাতান ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতান ওয়াকেনা আযাবান্ নার)

অর্থ ঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর আর জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদেরকে বাঁচাও (সূরা বাকারা ২০১)।

দ্ব  প্রত্যেক তাওয়াফে ভিন্ন ভিন্ন দোয়া আছে এরূপ বিশ্বাস না করা।

দ্ব  সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করা।

দ্ব  তাওয়াফ করার সময় নারীদের স্পর্শ থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকা।

দ্ব  তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’রাকাত সালাত আদায় করা। জায়গা না পেলে অন্য কোথাও আদায় করা।

দ্ব  সালাত শেষে যমযমের পানি পান করা ও মাথায় ঢালা।









উমরার ফজিলত

হাদিসে এসেছে, ‘রমজান মাসে উমরা করা এক হজ্জের সমান’ (তিরমিযী: হাদিস নং ৮৬১ ; ইবনে মাজাহ : হাদিস নং ২৯৮২)। ‘এক উমরা থেকে অন্য উমরা, এ-দুয়ের মাঝে কৃত পাপের কাফফারা’ (বুখারি : হাদিস নং ১৬৫০)। ‘যে ব্যক্তি এই ঘরে এলো, অতঃপর যৌনতা ও শরীয়ত-বিরুদ্ধ কাজ থেকে বিরত রইল সে মাতৃ-গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট ‘হওয়ার দিনের মত হয়ে ফিরে গেল।’ (বুখারি, মুসলিম) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানির মতানুসারে এখানে হজ্জকারী ও উমরাকারী উভয় ব্যক্তিকেই বুঝানো হয়েছে (ফাতহুল বারী : ৩/৩৮২)।



হজ্জেরসফরে একাধিক উমরা



রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরাম এক সফরে একাধিক উমরা করেননি। শুধু তাই নয় বরং তামাত্তু হজ্জকারীদেরকে উমরা আদায়ের পর হালাল অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে (মুসলিম)। তাই উত্তম হল এক সফরে একাধিক উমরা না করা। একাধিক উমরা থেকে বরং বেশি বেশি তাওয়াফ করাই উত্তম। তবে যদি কেউ উমরা করতেই চায় তাহলে হজ্জেরপরে করা যেতে পারে, যেমনটি করেছিলেন আয়েশা (ু) ; তবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন এমন কোন প্রমাণ নেই। বরং নিরুৎসাহিত করেছেন এমন বর্ণনা হাদীসে পাওয়া যায় (যাদুল মাআদ : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯২-৯৫)।



অন্যান্য সময়ে একাধিকবার উমরা করা প্রসঙ্গে

এক বর্ণনা অনুসারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জীবনে মোট চার বার উমরা করেছেন। প্রথমবার: হুদায়বিয়ার উমরা, যা পথে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় সম্পন্ন করতে পারেননি। বরং সেখানেই মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে হালাল হয়ে যান। দ্বিতীয়বার: উমরাতুল কাজা। তৃতীয়বার : জিয়িররানা থেকে। চতুর্থবার: বিদায় হজ্জের সাথে। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উমরার উদ্দেশ্যে হেরেমের এরিয়ার বাইরে বের হয়ে উমরা করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই (যাদুল মাআদ : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯২-৯৫)।

সাহাবায়ে কেরামের উমরা আদায়ের পদ্ধতি থেকে অবশ্য হজ্জের সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বছরে একাধিকবার উমরা করার বৈধতা প্রমাণিত হয়। মক্কায় ইবনে যুবায়ের (ু) এর শাসনামলে ইবনে উমর বছরে দুটি করে উমরা করেছেন। আয়েশা (ু) বছরে তিনটি পর্যন্ত উমরাও করেছেন (সাইয়িদ সাবিক : ফেকহুস্সুন্নাহ , খন্ড : ৭ , পৃ: ৭৪৯)। হাদীসে এসেছে, ‘তোমরা বার বার হজ্জ ও উমরা আদায় করো। কেননা এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহ বিমোচন করে দেয়’ (আলবানী : সহিহুন্নাসায়ী : হাদিস নং ৫৫৮)। সাহাবায়ে কেরামের ক্ষেত্রে দেখা যেত, এক উমরা আদায়ের পর তাদের মাথার চুল কাল হয়ে যাওয়ার পর আবার উমরা করতেন, তার আগে করতেন না (বিস্তারিত দেখুন : যাদুল মাআদ : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৯০-৯৫)।



মীকাত

 কাবা শরীফ গমনকারীদেরকে কাবা হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যে স্থানগুলো নবীজির হাদীস দ্বারা নির্ধারিত, ঐ জায়গাগুলোকে মীকাত বলা হয়। হারাম শরীফের চর্তুদিকেই মীকাত রয়েছে। বাংলাদেশীদের মীকাত হল ‘ইয়ালামলাম’ নামক পাহাড়। যাঁরা বিমানে যাবেন তাঁরা ঢাকা থেকে ইহরাম বেঁধে নেবেন। তবে নিয়ত করবেন ‘মীকাতে’ পৌঁছে বা এর পূর্বক্ষণে। নিয়ত করা যেন মীকাতে পৌঁছার আগেই হয়ে যায়,।তা না হলে দম দিতে হবে। যাঁরা নৌ পথে সামুদ্রিক জাহাজ যোগে বাংলাদেশ থেকে হজ্জ যাত্রা করেন তাঁরা জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে ৩০ মাইল দক্ষিণে ‘ইয়ালামলাম’ পাহাড়ের সোজা পোঁছলে ইহরাম বেঁধে নেবেন। তবে হজ্জের আগে মদীনা শরীফ যাওয়ার প্রোগ্রাম থাকলে মক্কা শরীফ আসার সময় মদীনা মুনাওয়ারা থেকে ৬ মাইল দুরবর্তী ’জুল হুলায়ফা’ নামক স্থানে ইহরাম বেঁধে নেবেন।  মনে রাখতে হবে যে, ইহরাম বাঁধা ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা যাবে না। ইহরাম বাঁধার অর্থ হল ইহরামের কাপড় পরে উমরা বা হজ্জের নিয়ত করা।

















ইহরাম

ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে পরিচ্ছন্নতার জন্য নিুলিখিত কাজ করা মুস্তাহাবঃ

নখ কাটা, গোফ খাট করা, বোগল ও নাভির নীচের লোম কামানো ও তা পরিষ্কার করা। তবে ইহরামের পূর্বে পুরুষ ও মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিষয়ে কোন বিধান পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য যে, দাড়ি কোন অবস্থায়ই কাটা যাবে না। নখ-চুল কাটার পর গোসল করাও মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে

وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإبِطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً

অর্থাৎ: গোঁফ ছোট করা, নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা এবং নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার কাজ গুলোকে ৪০ রাতের বেশি সময় অতিক্রম না করার জন্য আমাদেরকে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে (মুসলিম ২৫৮)।

 ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে মাথায়, দাড়িতে ও সারা শরীরে সুগন্ধি মাখা মুস্তাহাব। ইহরাম পরিধানের পর যদি এর সুগন্ধ শরীরে থেকে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই, তবে মেয়েরা সুগন্ধি মাখবে না। চাদরের মত ৫ হাত লম্বা সেলাইবিহীন দু’খানা সাদা পাক-পবিত্র কাপড় সংগে নিতে হবে। একখানা পরতে হবে, অপরখানা শরীরে জড়িয়ে নিতে হবে (এটা পুরুষের জন্য)। ৩য় আর কোন প্রকার কাপড় গায়ে রাখা যাবে না। যেমন টুপি, গেঞ্জি, জাইঙ্গা বা তাবীজ ইত্যাদি। তবে শীত নিবারণের জন্য চাদর ও কম্বল ব্যবহার করা যাবে। মেয়েদের ইহরামের জন্য বিশেষ কোন পোষাক নেই। মেয়েরা সাধারণত: যে কাপড় পরে থাকে সেটাই তাদের ইহরাম। তারা নিজ ইচ্ছা মোতাবেক ঢিলেঢালা ও শালীন পোষাক পরবে। তবে তা যেন পুরুষের পোষাকের মত না হয়। এটা কাল, সবুজ বা অন্য যে কোন রঙের হতে পারে। ইহরাম অবস্থায় মেয়েরা মুখ ঢেকে রাখবে না, নিকাব ও হাতমোজা পরবে না। তবে ভিন্ন পুরুষ সামনে এলে মুখ আড়াল করে রাখবে। অর্থাৎ নিকাব ছাড়া ওড়না বা অন্য কোন কাপড় দ্বারা মুখমণ্ডল ঢাকার অনুমতি আছে। ইহরাম অবস্থায় পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখে এমন কোন জুতা পরা যাবে না। কাপড়ের মোজাও পরবে না। তবে সেন্ডেল পরতে পারে।



নিয়ত

নামাযসহ অন্যান্য সকল ইবাদাতের নিয়ত করতে হয় মনে ইচ্ছা পোষণ করে। তবে ইহরামের সময় মুখে শুধু হজ্জ বা উমরা শব্দ উচ্চারণ করতে হয়। যারা প্রথমে উমরা করবেন এবং ৮ই যিলহজ্জ তারিখে হজ্জ করবেন তারা মীকাত থেকে শুধুমাত্র উমরার নিয়ত করবে। উমরা ও হজ্জের নিয়ত একত্রে করবে না।

উমরার সময় বলবেনÑ لَبَّيْكَ عُمْرَةً (লাব্বাইয়কা উমরাতান) অথবা বলবেন- اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً        (আল্লাহম্মা লাব্বাইয়কা উমরাতান) - তামাত্তু হজ্জকারীর জন্য।

হজ্জের সময় বলবেনÑ لَبَّيْكَ حَجًّا (লাব্বাইয়কা হাজ্জান) অথবা বলবেন, اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ حَجًّا (আল্লাহম্মা লাব্বাইয়কা হাজ্জান)-ইফরাদ হজ্জকারীর জন্য।

উমরা ও হজ্জ একত্রে করলে বলবেনÑ لَبَّيْكَ حَجًّا وَعُمْرَةً  (লাব্বাইয়কা হাজ্জান ওয়া উমরাতান) -ক্বিরান হজ্জকারী জন্য।

বদলী হজ্জের সময় ‘লাব্বইকা ...’ পক্ষ থেকে। لَبَّيْكَ عَنْ (فلان) বলবেন।

নিয়ত শেষ হওয়ামাত্র ‘তালবিয়াহ’ পাঠ শুরু করবেন, আর তাÑ বেশী বেশী পড়বেন, উচ্চস্বরে পড়বেন, তবে নারীরা পড়বে নীচু স্বরে, যাতে সে কেবল নিজে শুনতে পায়। বেশী বেশী যিক্র আয্কার করতে থাকবে। কিবলামুখী হয়ে তালবিয়াহ পড়া উত্তম, তাছাড়া উচু থেকে নীচে নামা ও নিচু থেকে উঁচু স্থানে উঠার সময়ও তালবিয়াহ পাঠ করা সুন্নাত। তালবিয়াহ ভাল করে মুখস্থ করে নিতে হবে। কেননা, হজ্জ ও উমরার জন্য এটি একমাত্র বিশেষ দোয়া।

তালবিয়ার বাক্যটি নিম্নরূপ:



لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ - لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ – إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ - لاَ شَرِيكَ لَكَ

(উচ্চারণ: “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শরীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শরীকা লাক”)।



অর্থ ঃ হাজির হয়েছি হে আল্লাহ! আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে আমি হাজির হয়েছি। আমি হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনার কোন শরীক নাই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও নেয়ামাত আপনার এবং রাজত্বও। আপনার কোন শরীক নেই।

لَبَّيْكَ = হাজির হয়েছি, اللَّهُمَّ = হে আল্লাহ, لاَ شَرِيكَ= আপনার কোন শরীক নাই, لَكَ= আপনার জন্য إِنَّ=নিশ্চয়, الْحَمْدَ=সকল প্রশংসা, النِّعْمَةَ=নেয়ামত, الْمُلْكَ=রাজত্ব।

ইহরামের কাপড় পরার পর যখনই নিয়ত করা শেষ হবে তখন থেকে তালবিয়াহ পাঠ শুরু করে হারাম শরীফে পৌঁছে তাওয়াফ শুরুর পূর্বক্ষণে শেষ করবে। আর হজ্জের বেলায় ১০ই যিলহজ্জে বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়াহ পাঠ অব্যাহত থাকবে। হাদীসে আছে- (ক) তালবিয়াহ পাঠকারীর সাথে তার ডান ও বামের গাছপালা এবং পাথরগুলোও তালবিয়াহ পড়তে থাকে। (খ) তালবিয়াহ পাঠকারীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ:

(১) চুল উঠানো বা কাটা, হাত ও পায়ের নখ কাটা। তবে শরীর চুলকানোর সময় ভুলে বা অজ্ঞাতসারে যদি কিছু চুল পড়ে যায় তাতে অসুবিধা নেই।

(২) ইহরাম বাঁধার পর সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না।

(৩) স্ত্রী সহবাস, যৌনক্রিয়া বা উত্তেজনার সাথে স্ত্রীর দিকে তাকানো, তাকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা, মর্দন ও আলিঙ্গন করা বা এ জাতীয় কথা বলা নিষেধ।

(৪) বিবাহ করা বা দেয়া, এমনকি প্রস্তাব দেওয়াও নিষেধ, চাই নিজের বা অন্যের হোক।

(৫) স্থলজ প্রাণী শিকার করা, হত্যা করা বা সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ। তবে পানির মাছ ধরা যাবে। হারামের সীমানার ভিতর প্রাণী শিকার করা ইহরাম বিহীন লোকদের জন্যও নিষেধ।

(৬) সেলাইযুক্ত কাপড় পরা। তবে ঘড়ি, আংটি, চশমা, কানের শ্রবণ যন্ত্র, বেল্ট, মানিব্যাগ ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে। মেয়েরা সেলাইযুক্ত কাপড় পরতে পারবে।

(৭) মাথা ও মুখ ঢেকে রাখা নিষেধ। ইহরামের কাপড়, পাগড়ী, টুপি তোয়ালে, গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়েও মাথা ঢেকে রাখা যাবে না। তবে ছাতা, তাবু, গাড়ী বা ঘরের ছাদের ছায়ার নীচে বসতে পারবেন। ভুলে বা অজ্ঞাতসারে যদি মাথা ঢেকে ফেলে তবে স্মরণ হওয়া মাত্র তা সরিয়ে ফেলতে হবে। মেয়েরা মাথা ঢেকে রাখবে।

(৮) মহিলারা হাত মোজা পরবে না। নিকাব দিয়ে মুখ ঢাকবে না। পর্দার প্রয়োজন হলে উড়না দিয়ে ঢাকবে।

(৯) ঝগড়া-ঝাটি করবে না।

(১০) ইহরাম অবস্থায় থাকুক বা না থাকুক মক্কা শরীফের হারামের সীমানার ভিতরে কেউ এমনিতেই গজিয়ে উঠা কোন গাছ বা সবুজ বৃক্ষলতা কাটতে পারবে না।

(১১) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরিধান করা। কিন্তু মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ নয়।

(১২) শরীরে সাবান লাগানো।

(১৩) উকুন, পোকা-মাকড় ও কীট-পতংগ ইত্যাদি মারা।

(১৪) কোন গোনাহর কাজ করা।

 ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষেধ এর কোন একটা কাজ যদি ভুলে বা না জেনে করে ফেলে তাহলে কোন দম বা ফিদইয়া দিতে হবে না। স্মরণ হওয়া মাত্র বা অবগত হওয়ার সাথে সাথে এ কাজ থেকে বিরত হয়ে যাবে এবং এজন্য ইস্তেগফার করবে। তবে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।

কিন্তু উযর বশতঃ একান্ত বাধ্য হয়ে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মাথার চুল উঠায় বা কেটে ফেলে তাহলে ফিদইয়া দিতে হবে। আর এর পরিমাণ হলো- (ক) একটি ছাগল জবাই করে গোশত বিলিয়ে দেয়া, অথবা (খ) ছয়জন মিসকিনকে এক বেলা খানা খাওয়াতে হবে, অথবা (গ) তিনদিন রোযা রাখবে।

উলামায়ে কিরামের কিয়াস অনুসারে মাথা ছাড়া অন্য অংশ থেকে চুল উঠালে বা কাটলে অথবা নখ কাটলে উপরে বর্ণিত ফিদইয়া কার্যকরী হবে।



ইহরামরত অবস্থায় বৈধ কাজসমূহ:



(১) গোসল করতে পারবে। পরনের ইহরামের কাপড় বদলিয়ে আরেক জোড়া ইহরামের কাপড় পরতে পারবে, ময়লা হলে কাপড় ধৌত করা যাবে।

(২) ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো, ফোঁড়া গালানো, দাঁত উঠানো ও অপারেশন করা যাবে।

(৩) মোরগ, ছাগল, গরু, উট ইত্যাদি জবাই করতে পারবে এবং পানিতে মাছ ধরতে পারবে।

(৪) মানুষের জন্য ক্ষতিকারক প্রাণী যেমন ঃ কুকুর, চিল, কাক, ইঁদুর, সাপ, বিচ্ছু, মশা, মাছি ও পিঁপড়া মারা যাবে। (নাসাঈ ২৮৩৫)

خَمْسٌ مِنْ الدَّوَابِّ لاَ جُنَاحَ فِي قَتْلِهِنَّ عَلَى مَنْ قَتَلَهُنَّ فِي الْحَرَمِ وَالإِحْرَامِ الْفَأْرَةُ وَالْحِدَأَةُ وَالْغُرَابُ وَالْعَقْرَبُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ

পাঁচ ধরনের প্রাণীকে হারামে ইহরাম অবস্থায় হত্যা করলে হত্যাকারীর কোন গুনাহ হবে না। সেগুলো হল ঃ ইদুর, চিল, কাক, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর।

(৫) প্রয়োজন হলে আস্তে আস্তে শরীর চুলকানো যাবে।

(৬) বেল্ট, আংটি, ঘড়ি, চশমা পরতে পারবে।

(৭) যেকোন ছায়ার নীচে বসতে পারবে।

(৮) সুগন্ধযুক্ত না হলে সুরমা ব্যবহার করা যাবে।

(৯) মেয়েরা সেলাইযুক্ত কাপড় পরতে পারবে এবং অলংকারও ব্যবহার করতে পারবে।

(১০) ইহরাম অবস্থায় পুরুষেরাও ছোটখাট সেলাই কাজ করতে পারবে।

(১১) কোমরের বেল্টে টাকা পয়সা ও কাগজপত্র রাখতে পারবে।

(১২) ডাকাত বা ছিনতাইকারী দ্বারা আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে আক্রমণকারীকে হত্যাও করা যাবে। আর নিজে নিহত হলে শহীদ হবে। এ উদ্দেশ্যে অস্ত্রও বহন করা যাবে।

(১৩) ইহরাম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে ইহরামের কোন ক্ষতি হয় না।



তাওয়াফের বিবরণ



পবিত্র কুরআনে এসেছে- এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাইলকে (ঁ) দায়িত্ব দিলাম যে তোমরা আমার ঘর পবিত্র করো তাওয়াফকারী ও ই’তিকাফকারীদের জন্য। (সূরা আল বাকারা : ১২৫)   এ আয়াত থেকে বুঝা যায় তাওয়াফ কাবা নির্মাণের পর থেকেই শুরু হয়েছে। তাওয়াফ এর শাব্দিক অর্থ কোন কিছুর চতুর্দিকে ঘোরা। হজ্জের ক্ষেত্রে তাওয়াফ হল কাবা ঘরের চারপাশে ৭ বার প্রদক্ষিণ করা। পবিত্র কাবা ব্যতীত অন্য কোনো জায়গায় কোনো জিনিসকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করা হারাম। বায়তুল্লাহ শরীফ দৃষ্টির আওতায় এলে দোয়া করার অনুমতি রয়েছে। ওমর (ু) যখন বায়তুল্লাহর দিকে তাকাতেন তখন নীচের দোয়াটি পড়তেন

اللّهُمَّ أنْتَ السَّلامُ وَمِنْكَ السَّلامُ فَحَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلامِ [১]

(উচ্চারণ: আল্লাহম্মা আনতাস্ সালাম ওয়া মিনকাস্ সালাম ফাহায়্যিনা রাব্বানা বিস্সালাম)



তাওয়াফের শর্তসমূহ

 হানাফী মাযহাব মতে তাওয়াফের শর্ত ৩টি, যথাঃ

(১) তাওয়াফের নিয়ত করা।

(২) তাওয়াফের ৭ চক্র পূর্ণ করা।

(৩) মসজিদে হারামের ভিতরে থেকে কাবার চারপাশে তাওয়াফ করা।



তাওয়াফের ওয়াজিবসমূহ

১. পবিত্রতা অর্জন করা (অযূ/গোসল করা)।

২. সতর ঢাকা।

৩. হাজ্রে আসওয়াদকে বামপাশে রেখে ডানদিক থেকে তাওয়াফ শুরু করা।

৪. হাতীমের বাইরে থেকে তাওয়াফ করা।

৫. পায়ে হেটে তাওয়াফ করা। অক্ষম ব্যক্তির খাটিয়ায় চড়ে তাওয়াফ করতে পারবে। ইবনে আব্বাস (ু) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে.‘ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উটের ওপর আরোহণ করে তাওয়াফ করেছেন। তিনি যখনই রুকনের বরাবর এসেছেন হাতে-থাকা কোনো কিছু দিয়ে উহার দিকে ইশারা করেছেন, ও আল্লাহ আকবার বলেছেন (বুখারি শরীফ)।

৬. এক নাগাড়ে সাত চক্কর দিয়ে তাওয়াফ পূর্ণ করা।

৭. সাত চক্করে এক তাওয়াফ, এটা পূর্ণ হলে মাকামে ইবরাহীমের পিছনে গিয়ে দু’রাকআত সালাত আদায় করা।



তাওয়াফের সুন্নাত কার্যাবলী



১.      তাওয়াফের শুরুতে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করা।

২.      মাতাফে তাওয়াফের শুরুতে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করা।

৩.     যে তাওয়াফের পর সাঈ আছে তাতে ‘ইযতিবা’ করা অর্থাৎ ইহরামের চাদরের দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেয়া।

৪.      প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা অর্থাৎ বীর দর্পে হেলে দুলে দ্রুত পায়ে চলা।

৫.     বাকী চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করা।

৬.      তাওয়াফ শুরু করার পূর্বক্ষণে হাজরে আসওয়াদের সোজাসুজি দাঁড়িয়ে بِسْمِ اللهِ اللهُ أَكْبَرُ (“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার”) বলে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠান।

৭.     প্রত্যক চক্কর শেষে  হাজরে আসওয়াদকে চুমু প্রদান করা।

৮.     তাওয়াফ শেষে সুন্নাত হল যমযম পান করতে চলে যাওয়া, কিছু পানি মাথায় ঢেলে দেয়া, অতঃপর সম্ভব হলে পুনরায় হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করা। এরপর সাফা-মারওয়ায় সাঈ করতে চলে যাওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই করেছেন।





তাওয়াফ করার পদ্ধতি

 তাওয়াফ করার নিয়মাবলীঃ

(১) তাওয়াফ শুরু করার পূর্বেই তালবিয়াহ পাঠ বন্ধ করে দেয়া। এরপর মনে মনে তাওয়াফের নিয়ত করা। নিয়ত না করলে তাওয়াফ শুদ্ধ হবে না। নিয়ম হল প্রথমে ‘হাজারে আসওয়াদ (কাল পাথরের) কাছে যাওয়া, “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে এ পাথরকে চুমু দিয়ে তাওয়াফ কার্য শুরু করা। কিন্তু রমাযান ও হজ্জের মৌসুমে প্রচণ্ড ভীড় থাকে। বয়স্ক, বৃদ্ধ ও মহিলাদের জন্য পাথর চুম্বনের কাজটি প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের ভীড় দেখলে ধাক্কাধাক্কি করে নিজেকে ও অন্য হাজীকে কষ্ট না দিয়ে পাথর চুমু দেয়া ছাড়াই “হাজ্রে আসওয়াদ” থেকে তাওয়াফ শুরু করা। কাবাঘরের “হাজারে আসওয়াদ” কোণ থেকে মসজিদে হারামের দেয়াল ঘেষে সবুজ বাতি দেয়া আছে। এ রেখা বরাবর থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার এখানে আসলে তাওয়াফের এক চক্র শেষ হবে। এভাবে ৭ চক্র পূর্ণ করতে হবে। ভীড়ের পরিমাণ যদি আরো বেশী দেখা যায় এবং গ্রাউন্ড ফ্লোরে তাওয়াফ করা কঠিন মনে হয় তাহলে দু’তলা বা ছাদের উপর দিয়েও তাওয়াফ করা যাবে। সেক্ষেত্রে সময় একটু বেশী লাগলেও ভীড়ের চাপ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। ছাদের উপর তাওয়াফ করলে দিনের প্রখর রৌদ্রতাপ ও প্রচণ্ড গরমে না গিয়ে রাতের বেলায় করা যাবে। বেশী ভীড়ের মধ্যে ঢুকে মানুষকে কষ্ট দেয়া উচিৎ নয়।

(২) কাবাঘরকে বামপাশে রেখে তাওয়াফ  করতে হয়। তাওয়াফের প্রথম চক্রে “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে নীচের দোয়াটি পড়তে পারলে ভাল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। দোয়াটি হল ঃ

اَللَّهُمَّ إِيْمَانًا بِكَ وَتَصْدِيْقًا بِكِتَابِكَ وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَاتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مَحَمَّدٍ -صلى الله عليه وسلم-

(উচ্চারণ: আল্লাহম্মা ইমানান বিকা ওয়া তাসদিকান বিকিতাবিকা ওয়া ওয়াফাআন বি’আহদিকা ওয়া ইত্তিবা’আন লিসুন্নাতে নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

অর্থ ঃ হে আল্লাহ! তোমার প্রতি ঈমান এনে, তোমার কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণের জন্য তোমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণ করে এ তাওয়াফ করছি।

(৩) প্রথম তিন চক্রে পুরুষগণ ছোট ছোট পদক্ষেপে দৌড়ের ভঙ্গিতে সামান্য একটু দ্রুত গতিতে চলতে চেষ্টা করবে। আরবীতে এটাকে ‘রম্ল’ বলা হয়। বাকী চার চক্র সাধারণ হাঁটার গতিতে চলবে। মক্কায় প্রবেশ করে প্রথম যে তাওয়াফটি করতে হয় শুধু এটাতেই প্রথম তিন চক্রের রম্লের এ বিধান। এরপর যতবার তাওয়াফ করবে সেগুলোতে আর “রম্ল” করতে হবে না। মহিলাদের রম্ল করতে হয় না।

(৪) পুরুষেরা ইহরামের গায়ের কাপড়টির একমাথা ডান বগলের নীচ দিয়ে এমনভাবে পেঁচিয়ে দিবে যাতে ডান কাঁধ, বাহু ও হাত খোলা থাকে। কাপড়ের বাকী অংশ ও উভয় মাথা দিয়ে বাম কাঁধ ও বাহু ঢেকে ফেলবে। এ নিয়মটাকে আরবীতেও اضطباع (ইয্তিবা) বলা হয়। এটা শুধুমাত্র প্রথম তাওয়াফে করতে হয়। পরবর্তী তাওয়াফগুলোতে এ নিয়ম নেই, অর্থাৎ ডান কাঁধ ও বাহু খোলা রাখতে হয় না।

(৫) কাবাঘরের চারটি কোণের মধ্যে একটি কোণের নাম হল “রুক্নে ইয়ামানী”। হাজ্রে আসওয়াদ-এর কোণটিকে প্রথম কোণ ধরে তাওয়াফ শুরু করে আসলে “রুক্নে ইয়ামানী” হবে চতুর্থ কোণ। এ “রুক্নে ইয়ামানী”র পাশে এসে পৌঁছলে ভীড় না হলে এ কোণকে ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সাবধান, এ রুক্নে ইয়ামেনীকে চুমু দেয়া যাবেনা, এর পাশে এসে হাত উঠিয়ে ইশারাও করবে না এবং সেখানে ‘আল্লাহু আকবার’ও বলবে না। ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে হাজ্রে আসওয়াদে পৌঁছে। তাওয়াফ শুরু করবে “হাজ্রে আওয়াদ” থেকে এবং শেষও করবে সেখানে গিয়েই।

(৬) রুক্নে ইয়ামেনী ও হাজ্রে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে নিম্নের এ দোয়াটি পড়া মুস্তাহাব ঃ

 رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

(উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুন্য়া হাসানাতান ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতান ওয়াকেনা আযাবান্ নার)

অর্থ ঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর আর জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদেরকে বাঁচাও (সূরা বাকারা ২০১)।



(৭) তাওয়াফের প্রত্যেক চক্রেই হাজ্রে আসওয়াদ স্পর্শ করা ও চুমু দেয়া উত্তম। কিন্তু প্রচণ্ড ভীড়ের কারণে এটি খুবই দূরূহ কাজ। সেক্ষেত্রে প্রতি চক্রেই হাজ্রে আসওয়াদের পাশে এসে এর দিকে মুখ করে ডান হাত উঠিয়ে ইশারা করবেন। ইশারাকৃত এ হাত চুম্বন করবেন না। ইশারা করার সময় একবার বলবেন بسم الله الله أكبر (‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’)।

(৮) তাওয়াফরত অবস্থায় খুব বেশী বেশী যিক্র, দোয়া ও তাওবা করতে থাকবে। কুরআন তিলাওয়াত করা যায়। কিছু কিছু বইতে আছে প্রথম চক্রের দোয়া, ২য় চক্রের দোয়া ইত্যাদি। কুরআন হাদীসে এ ধরনের চক্রভিত্তিক দোয়ার কোন ভিত্তি নেই। যতটুকু সম্ভব বেশি বেশি দোয়া করতে থাকবে। তাছাড়া নিজ ভাষায় মনের কথাগুলো আল্লাহ্র কাছে বলতে থাকবে, মিনতি সহকারে চাইতে থাকবে। দলবেঁধে সমস্বরে জোরে জোরে দোয়া করে অন্যদের দোয়ার মনোযোগ নষ্ট না করা। আরবীতে দোয়া করলে এগুলোর অর্থ জেনে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে যাতে আল্লাহর সাথে কি বলা হচ্ছে তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়।

(৯) তাওয়াফের ৭ চক্র শেষ হলে দু’কাঁধ এবং বাহু ইহরামের কাপড় দিয়ে আবার ঢেকে ফেলতে হবে এবং “মাকামে ইব্রাহীমের” কাছে গিয়ে পড়বে:

وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلّىً

(উচ্চারণ: ওয়াত্তাখিজু মিন মাকামে ইবরাহীমা মুসাল্লা)

অর্থ ঃ ইব্রাহীম (ঁ) এর দণ্ডায়মানস্থলকে সালাত আদায়ের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো (বাকারা ঃ ১২৫)।

অতঃপর তাওয়াফ শেষে এ মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে এসে দু’রাকআত সালাত আদায় করা। ভীড়ের কারণে জায়গা না পেলে মসজিদে হারামের যে কোন অংশে এ সালাত আদায় যায়। মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবেনা, যে পথে মুসল্লীরা চলাফেরা করে সেখানে সালাতে দাঁড়ানো উচিৎ নয়। সুন্নত হলো এ সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর প্রথম রাকআতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস পড়া।

(১০) এরপর যমযমের পানি পান করতে যাওয়া মুস্তাহাব। পান শেষে যমযমের কিছু পানি মাথার উপর ঢেলে দেয়া সুন্নাত। নবী করীম (ﷺ)এমনটি করতেন। (আহমাদ)

(১১) মুস্তাহাব হলো পুনরায় হাজ্রে আসওয়াদের কাছে গিয়ে এটা স্পর্শ করা ও চুম্বন করা। সম্ভব হলে এটা করা।

(১২) বেগানা পুরুষের সামনে মহিলারা হাজারে আসওয়াদ চুম্বনের সময় মুখ খোলা রাখবে না। কাবার গা ঘেঁষে পুরুষদের মধ্যে না ঢুকে মেয়েদের একটু দূর দিয়ে তাওয়াফ করা উত্তম।

(১৩) তাওয়াফ করার সময় যদি জামা‘আতের ইকামত দিয়ে দেয় তখন সঙ্গে সঙ্গে তাওয়াফ বন্ধ করে দিয়ে নামাযের জামা‘আতে শরীক হওয়া এবং ডান কাঁধ ও বাহু চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলা। নামাযরত অবস্থায় কাঁধ ও বাহু খোলা রাখা জায়েয নেই। সালাত শেষে তাওয়াফের বাকী অংশ পূর্ণ করা।



নারীর তাওয়াফ



নারীরা পুরুষদের সাথে মিশ্রিত হয়ে তাওয়াফ করবেনা। যখন ভিড় কম থাকে তখন নারীদের তাওয়াফ করা বাঞ্ছনীয়। অথবা, একটু সময় বেশি লাগলেও দূর দিয়ে নারীরা তাওয়াফ করবে। পুরুষের ভিড়ে নারীরা হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে যাবে না। আয়েশা (ু) এর তাওয়াফের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে

 كانت عائشة رضى الله عنها تطوف حجرة من الرجال ، لا تخالطهم ، فقالت امرأة: انطلقى نستلم يا أم المؤمنين . قالت: انطلقي -- عنك ،وأبت .

Ñআয়েশা (ু) পুরুষদের একপাশ হয়ে একাকী তাওয়াফ করতেন। পুরুষদের সাথে মিশতেন না। এক মহিলা বললেন: চলুন, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ করি। তিনি বললেন, তুমি যাও আমাকে ছাড়। তিনি যেতে অস্বীকার করলেন (বুখারি : ১৫১৩)।



ঋতুস্রাব অবস্থায় নারীরা তাওয়াফ করবে না। প্রয়োজন হলে হজ্জের সময়ে ঋতুস্রাব ঠেকানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, ব্যবহার করার বৈধতা রয়েছে। তাওয়াফের সময় নারীর জন্য কোনো রামল বা ইযতিবা নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নারীকে রামল ইযতিবা করতে বলেননি।

 হজ্জের ফরজ তাওয়াফের সময় যদি কারও ঋতুস্রাব চলে আসে এবং ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করা কোনো ক্রমেই সম্ভব না হয়, পরবর্তীতে এসে ফরজ তাওয়াফ আদায় করারও কোনো সুযোগ না থাকে, এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞ ওলামাগণ ফতোয়া দিয়েছেন যে ন্যাপকিন দিয়ে ভালো করে বেঁধে তাওয়াফ আদায় করে নিতে পারে।



“হাজারে আসওয়াদ” ও ‘রুক্নে ইয়ামেনী” স্পর্শ করার ফযীলত

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন ঃ

(ক) “হাজ্রে আসওয়াদ” ও “রুক্নে ইয়ামেনী”র স্পর্শ গুনাহগুলোকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলে দেয়। (তিরমিযী)।

(খ) নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা “হাজ্রে আসওয়াদ”কে কিয়ামতের দিন উত্থিত করবেন। তার দু’টি চক্ষু থাকবে যা দ্বারা সে দেখতে পাবে, একটি জিহ্বা থাকবে যা দ্বারা সে কথা বলবে এবং যারা তাকে স্পর্শ করেছে সত্যিকারভাবে এ পাথর তাদের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (তিরমিযী)



সাঈ করা السعي



দ্ব   সাঈ যাতে যথার্থভাবে আদায় হয় সেজন্য নিুবর্ণিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা

দ্ব  সাঈ করার নিয়ত বা প্রতিজ্ঞা করা।

দ্ব  হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম (চুম্বনÑস্পর্শ) করে সাঈর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।

দ্ব  ওজু অবস্থায় সাঈ করা।

দ্ব  তাওয়াফ শেষ করার সাথে সাথে সাঈ করা।

দ্ব  সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে, হাত উঠিয়ে, দীর্ঘক্ষণ দোয়া করা।

দ্ব  পুরুষদের জন্য সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে একটু দৌড়ে অতিক্রম করা।

দ্ব  সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে পড়বে

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ ، إِنَّكَ أَنْت َالأَعَزُّالأَكْرَمُ.                                          

     (উচ্চারণ: রাব্বিগ ফের ওয়ারহাম, ইন্নাকা আনতাল আ’য়াজ্জুল আক্রাম্)।

      অর্থ: হে আল্লাহ ! ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয় তুমি মহা পরাক্রমশালী ও মহা দয়াবান (তাবরানি : ৮৭০)।



দ্ব সাত চক্কর পূর্ণ করা।

দ্ব সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম করা।

দ্ব সাফা মারওয়া বরাবর মধ্যবর্তী স্থানে সাঈ করা। মাসআ অর্থাৎ সাঈ করার সুনির্ধারিত স্থানের বাইরে দিয়ে চক্কর লাগালে সাঈ হবে না।

দ্ব দুই চক্করের মাঝে বেশি বিলম্ব না করা।



উল্লিখিত পয়েন্টগুলো যথাযথবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। তাহলে সাঈ শত ভাগ শুদ্ধ হবে।





সাঈ অর্থ দৌড়ানো। কাবার অতি নিকটেই দু’টো ছোট্ট পাহাড় আছে যার একটির নাম ‘সাফা’ ও অপরটি ‘মারওয়া’। এ দু’ পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে মা হাজেরা শিশুপুত্র ইসমাঈল ঁ-এর পানির জন্য ছোটাছুটি করেছিলেন। ঠিক এ জায়গাতেই হজ্জ ও উমরা পালনকারীদেরকে দৌড়াতে হয়। শাব্দিক অর্থে দৌড়ানো হলেও পারিভাষিক অর্থে স্বাভাবিক গতিতে চলা। শুধুমাত্র দুই সবুজ পিলার দ্বারা চিহ্নিত মধ্যবর্তী স্থানে সামান্য একটু দৌড়ের গতিতে চলতে হয়, তবে মেয়েরা দৌড়াবে না।

তাওয়াফ শেষ করেই ‘সাফা’ পাহাড়ের দিকে রওয়ানা দিতে হবে। সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর অনুসরণে বলা:

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ، أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهِ.

(উচ্চারণ: ইন্নাস্সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআয়িরিল্লাহ, আব্দায়ু বিমা বাদায়াল্লাহু বিহি)

অর্থ: নিশ্চয়ই সাফা মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন। আমি শুরু করছি আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন (ইমাম মুসলিম কর্তৃক জাবের রা. হতে বর্ণিত হাদিস : কিতাবুল মুগনি : ৩১০)।

সাফাতে উঠার সময় নীচের দোয়াটি পড়বে:

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا -

(উচ্চারণ: ইন্নাস্সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা’আয়িরিল্লাহ, ফামান হাজ্জাল বাইতা আওয়ে’তামারা ফালা জুনাহা আলাইহে আঁই ইয়াত্তাওয়াফা বিহিমা)

অর্থ: “নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া (পাহাড় দু’টো হচ্ছে) আল্লাহ (ও)-র নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত। অতএব যদি তোমাদের মধ্যে কোন লোক হাজ্জ কিংবা উমরা আদায় (করার ইচ্ছা) করে, তার জন্য এ উভয় পাহাড়ে তাওয়াফ করায় কোন দোষ নেই” (আল বাকারা-১৫৮)।

এ দোয়াটি এখানে ছাড়া আর কোথাও না পড়া। সাঈর প্রথম চক্রের শুরুতেই শুধুমাত্র পড়বে। প্রতি চক্রে বারবার এটা পুনরাবৃত্তি না করা।

(২) এরপর যতটুকু সম্ভব সাফা পাহাড়ে উঠা। একেবারে চূড়ায় আরোহণ করা জরুরী নয়। তারপর কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে হাত তুলে আল্লাহর একত্ববাদ, বড়ত্ব ও প্রশংসার ঘোষণা দিয়ে নীচের দোয়াটি পড়বে:



اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ.

(উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল্ মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাছারা আব্দাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ্)।

অর্থ ঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক ও একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আসমান যমীনের সার্বভৌম আধিপত্য একমাত্র তাঁরই। সকল প্রশংসা শুধু তাঁরই প্রাপ্য। তিনিই প্রাণ দেন এবং তিনিই আবার মৃত্যুবরণ করান। সবকিছুর উপরই তিনি অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। যত ওয়াদা তাঁর আছে তা সবই তিনি পূরণ করেছেন। স্বীয় বান্দাকে তিনি সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্র“দলকে পরাস্ত করেছেন। (আবূ দাউদ ঃ ১৯০৫)

এ দোয়াটি তিনবার পড়ার পর দু’হাত উঠিয়ে যত সম্ভব দোয়া করা, আরবীতে বা নিজের ভাষায় দুনিয়া ও আখেরাতের অসংখ্য কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করা।

(৩) অতঃপর ‘সাফা’ থেকে নেমে ‘মারওয়া’র দিকে হাঁটা। আর আল্লাহ্র যিক্র ও দোয়া অব্যাহত রাখা নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য এবং মুসলিম মিল্লাতের সবার জন্য। যখন সবুজ চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবে সেখান থেকে পরবর্তী সবুজ চিহ্নিত স্থান পর্যন্ত পুরুষেরা যথাসাধ্য দৌড়াতে চেষ্টা করবে। তখন নিুোক্ত দু‘আটি পাঠ করবেন ঃ

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ ، إِنَّكَ أَنْت َالأَعَزُّالأَكْرَمُ.                                          

(উচ্চারণ: রাব্বিগ ফের ওয়ারহাম, ইন্নাকা আনতাল আ’য়াজ্জুল আক্রাম্)।

অর্থ: হে আল্লাহ ! ক্ষমা করে দাও, নিশ্চয় তুমি মহা পরাক্রমশালী ও মহা দয়াবান (তাবরানি : ৮৭০)।

তবে কাউকে কষ্ট না দেয়া। দ্বিতীয় সবুজ চিহ্নিত স্থানটি অতিক্রম করার পর আবার সাধারণভাবে হাঁটা শুরু করবে। এভাবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে এর উঁচুতে আরোহণ করবে। অতঃপর কিবলামুখী হয়ে ‘সাফা’ পাহাড়ে যা যা করেছিলেন সেগুলো এখানেও করবেন। অর্থাৎ الله أكبر থেকে শুরু করে وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ পর্যন্ত পুরাটা তিনবার পড়া, অতঃপর দো‘আ করা। ‘সাফা’ থেকে ‘মারওয়া’য় আসার পর  এক চক্র শেষ হয়।

(৪) এবার ‘মারওয়া’ থেকে নেমে আবার ‘সাফা’র দিকে চলতে হবে। সবুজ চিহ্নিত দুই বাতির মধ্যবর্তী স্থানে সাধ্যমত দৌড়াতে চেষ্টা করবে। যখনি সবুজ চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করবে তখনি আবার সাধারণ গতিতে হাঁটতে থাকবে। ‘সাফা’ পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমবার যা যা পড়েছিলে ও করেছিলে এবারও এখানে পড়তে ও করতে হবে। আবার মারওয়ায় গিয়েও তাই করবে। এভাবে প্রত্যেক চক্রেই এ নিয়ম পালন অব্যাহত রাখা। সাফা থেকে মারওয়ায় গেলে হয় এক চক্র, আবার মারওয়া থেকে সাফায় ফিরে এলে হয় আরেক চক্র। এভাবে ৭ চক্র পূর্ণ করতে হবে।

(৫) ‘মারওয়া’য় গিয়ে যখন ৭ চক্র পূর্ণ হবে তখন চুল কেটে হালাল হয়ে যেতে হবে। পুরুষেরা মাথা মুণ্ডন করবে অথবা সমগ্র মাথা থেকে চুল কেটে ছোট করে নেবে। আর মহিলারা আঙ্গুলের উপরের গিরার সমপরিমাণ চুল কাটবে। চুল কাটার আরো বিস্তারিত নিয়ম দেখুন মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা অধ্যায়ে। চুল কাটা শেষে হালাল হয়ে যাওয়ার পর ইহরামের কাপড় খুলে অন্য কাপড় পরবে। ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ আপনার জন্য নিষিদ্ধ ছিল এগুলো এখন বৈধ হয়ে গেল।



যমযম

যমযম হল ঐ কূপের নাম যা বর্তমানে হাজরে আসওয়াদের পূর্বে ও মাকামে ইবরাহীমের দক্ষিণে অবস্থিত। এ শব্দটি আরবি ‘যামযামাহ’ থেকে উদগত। সাধারণভাবে এর অর্থ আওয়াজ। ইবনে কুতাইবা বলেন, পানি উৎসারিত হলে যে শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাকেই আরবগণ ‘যমযম’ বলে অভিহিত করেন।

‎যমযমের পানি পান করার আদব

কেবলামুখী হয়ে তিন নিশ্বাসে আল্লাহর নাম স্মরণ করে যমযমের পানি পান করতে হয়। পেট ভরে পানি পান করতে হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আমাদের মাঝে ও মোনাফেকদের মাঝে পার্থক্য এই মোনাফেকরা পেটভরে পানি পান করে না (ইবনে মাযাহ, দারা কুতনী)। পানি পান করা শেষ হলে আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়। ইবনে আব্বাস (ু) এর একটি বর্ণনায়- তিনি বলেন,‘ যখন তুমি যমযমের পানি পান করবে, কেবলামুখী হবে, আল্লাহকে স্মরণ করবে, ও তিন বার নিশ্বাস নিবে। তুমি তা পেট ভরে খাবে ও শেষ হলে আল্লাহর প্রশংসা করবে।  ইবনে আব্বাস (ু) যমযমের পানি পানের পূর্বে এই দোয়া পড়তেন,

 ‘اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًٍا نَافِعًا ، وَرِزْقًا وَاسِعًا ، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ.

(উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস’আলুকা ইলমান নাফি’আন, ওয়া রিযকান ওয়াসি’আন, ওয়া শিফা’আন মিন কুল্লি দা’ঈন।)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্ত রিযিক চাই ও সকল প্রকার রোগ থেকে শেফা কামনা করছি’ (দারা কুতনী)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পানি পান করার পর মাথায়ও কিছু পানি ঢালতেন, অতঃপর সাঈ করার জন্য প্রস্তুতি নিন।

মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা (اَلْحَلْقُ أَوِ التَّقْصِيْرُ)

চুলকাটা হজ্জ ও উমরা উভয় ইবাদতের ক্ষেত্রে ওয়াজিব। হাদী (পশু) জবেহ হয়েছে বলে নিশ্চিত হলে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করতে হবে। তবে মুণ্ডন করাই উত্তম। পবিত্র কুরআনে মুণ্ডন করার কথা আগে এসেছে, ছোট করার কথা পরে। এরশাদ হয়েছে, ‘مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ Ñ তোমাদের কেউ কেউ মাথা মুণ্ডন করবে ও কেউ কেউ চুল ছোট করবে (সূরা আল ফাতহ : ২৭)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)নিজেও মাথা মুণ্ডন করেছিলেন। হাদিসে এসেছে, আনাস (ু) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিনায় এলেন, জামরাতে এসে তিনি কঙ্কর নিক্ষেপ করলেন। এরপর তিনি মিনায় তাঁর অবস্থানের জায়গায় এলেন ও কোরবানি করলেন। এরপর তিনি ক্ষৌরকারকে বললেন, নাও। তিনি হাত দিয়ে (মাথার) ডান দিকে ইশারা করলেন, অতঃপর বাম দিকে। এরপর মানুষদেরকে তা দিতে লাগলেন (মুসলিম :২২৯৮)। যারা মাথা মুণ্ডন করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছেন (رحم الله المحلقين) তিন বার। আর যারা চুল ছোট করে তাদের জন্যে দোয়া করেছেন (رحم الله المقصرين) এক বার। হাদিসে এসেছে, ‘আর তোমার মাথা মুণ্ডন কর, এতে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে একটি ছোয়াব ও একটি গুনাহের ক্ষমা রয়েছে (মুসলিম : হাদিস নং ৩৪৮)।

মহিলাদের জন্য মাথা মুণ্ডনের কোন বিধান নেই। তারা তাদের মাথার চার ভাগের একাংশ চুলের অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের উপরের গিরার সমপরিমাণ (অর্থাৎ এক ইঞ্চির একটু কম) চুল কেটে দেবে। মেয়েরা এর চেয়ে বেশী পরিমাণ চুল কাটবে না।

لَيْسَ عَلَى النِّسَاءِ حَلْقٌ إِنَّمَا عَلَى النِّسَاءِ التَّقْصِيرُ

মাথা মুণ্ডনের পর নখ কাটা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)নখ কেটেছিলেন (সাইয়িদ সাবেক : ফেকহুস্সুন্নাহ , প্রাগুক্ত)।  ইবনে ওমর (ু) হজ্জ অথবা উমরার পর দাড়ি ও গোঁফও সামান্য কাটতেন (বায়হাক্কী : হাদিস নং ৯১৮৬)।  তবে দাঁড়ির ক্ষেত্রে এক মুষ্টির বেশি হলে ইবনে ওমর (ু) এর মতো করা যেতে পারে, অন্যথায় নয়। বগল ও নাভির নীচ পরিষ্কার করাও বাঞ্ছনীয়। কেননা তা পবিত্র কুরআনের নির্দেশ (وليَقْضُوْا تَفَثَهُمْ Ñ এবং তারা যেন তাদের ময়লা পরিষ্কার করে।) এর আওতায় পড়ে।

ক্ষৌর-কার্যের পর গোসল করে শরীরের ময়লা পরিষ্কার করে সেলাই করা কাপড় পরবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে। আয়েশা (ু) থেকে বর্ণীত এক হাদিসে এসেছে- আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে সুগন্ধযুক্ত করতাম তাঁর ইহরামের জন্য, ইহরাম বাঁধার পূর্বে, এবং তাঁর হালাল হওয়ার জন্য বায়তুল্লাহর তাওয়াফের পূর্বে (মুসলিম)। এভাবে প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে সেলাই করা কাপড় পরিধান, সুগন্ধি ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে। তবে স্বামী-স্ত্রীর চুম্বন মিলন ইত্যাদি তখনও বৈধ হবে না। তাওয়াফে যিয়ারার পরই কেবল এসব সম্ভব হবে, যখন সম্পূর্ণরূপে হালাল হয়ে যাবে।



তাওয়াফে যিয়ারত

১০ জিলহজ্জের অন্যতম আমল হল তাওয়াফে যিয়ারত। তাওয়াফে যিয়ারত ১০ তারিখেই সেরে নেয়া ভালো। জমহুর ফুকাহার নিকট ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে তাওয়াফে যিয়ারত করে নেয়া উত্তম। তবে এরপরেও করা যেতে পারে এবং এর জন্য কোনো দম দিতে হবে না। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) এর অভিমতও এটাই। অর্থাৎ তাওয়াফে যিয়ারত আদায়ের সময়সীমা উন্মুক্ত এবং বারো তারিখের পরে আদায় করলে কোনো দম দিতে হবে না। (আলা কাসানী : বাদায়িউস্সানায়ে’ : খন্ড ২ , পৃ : ৩১৪)। কঙ্কর নিক্ষেপ, হাদী জবেহ, ক্ষৌর কার্য এ-তিনটি আমল শেষ করে গোসল করে, সুগন্ধি মেখে সেলাইযুক্ত কাপড় পড়ে পবিত্র কাবার দিকে রওয়ানা হতে হবে। শুরুতে উমরা আদায়ের সময় যে নিয়মে তাওয়াফ করা হয়েছে ঠিক সে নিয়মে তাওয়াফ করবে। এ তাওয়াফটি হল হজ্জের ফরজ তাওয়াফ, এ তাওয়াফে রামল ও ইযতিবা নেই। তাওয়াফের পর, সাফা মারওয়ার সাঈ করবে।



ইফরাদ হজ্জকারী তাওয়াফে কুদুমের পর সাঈ করে থাকলে এখন আর সাঈ করতে হবে না। ক্বিরান হজ্জকারীও পূর্বে সাঈ করে থাকলে এখন আর সাঈ করতে হবে না। তবে তামাত্তু হজ্জকারীকে অবশ্যই সাঈ করতে হবে। কেননা তামাত্তু হজ্জকারীর ইতোপূর্বে সাঈ করে নেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।













মিনায় রাত্রিযাপন

তাওয়াফ-সাঈ শেষ করে মিনায় ফিরে আসতে হবে। ১০ তারিখ দিবাগত রাত ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করতে হবে। ১২ তারিখ যদি মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে যায় তাহলে ১২ তারিখ দিবাগত রাতও মিনায় যাপন করতে হবে। ১৩ তারিখ কঙ্কর মেরে তারপর মিনা ত্যাগ করতে হবে।

মিনায় রাত্রিযাপন গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যোহরের সালাত মসজিদুল হারামে আদায় ও তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করে মিনায় ফিরে এসেছেন ও তাশরীকের রাতগুলো মিনায় কাটিয়েছেন (আবু দাউদ: ১৬৮৩)।  ইবনে ওমর (ু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘ওমর (ু) আকাবার ওপারে (মিনার বাইরে) রাত্রিযাপন করা থেকে নিষেধ করতেন এবং তিনি মানুষদেরকে মিনায় প্রবেশ করতে নির্দেশ দিতেন (ইবনু আবি শায়বা: ১৪৩৬৮)।

হানাফি মাজহাবের নির্ভরযোগ্য মতামত হল, আইয়ামে তাশরীকে মিনার বাইরে অবস্থান করা মাকরুহে তাহরীমি (ترك المقام بها مكروه تحريما) (প্রাগুক্ত)। তাই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দিনের বেলায়েও মিনায় অবস্থায় করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোও মিনায় কাটিয়েছেন।



১১, ১২, ও ১৩ জিলহজ্জ কঙ্কর নিক্ষেপ প্রসঙ্গ

কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। কঙ্কর নিক্ষেপের দিন চারটি। ১০, ১১, ১২ও ১৩ জিলহজ্জ। ১০ জিলহজ্জ কেবল বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয় যা ইতোপূর্বে সেরে নিয়েছেন। অন্যান্য দিন (১১,১২,১৩ তারিখ) তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয়। এ দিনগুলোয় কঙ্কর নিক্ষেপের প্রথম ওয়াক্ত শুরু হয় দুপুরে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে, চলতে থাকে দিবাগত রাতে সুবেহ সাদেক উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত।



১১ তারিখের কঙ্কর নিক্ষেপ

১১ জিলহজ্জ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। প্রথমে ছোট জামরায় ৭ টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। ছোট জামরায় যা মসজিদে খায়েফের নিকটে ও মিনার দিক থেকে পদব্রজিদের রাস্তা হয়ে এলে, প্রথমে অবস্থিত। এ জামরাকে ‘ জামরাতুস্সুগরা’ বলেও ডাকা হয়। কাবা শরীফ বাম দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে দাঁড়িয়ে খুশুখুজুর সাথে আল্লাহর  নিদর্শনেরÑ যথাযথ তাজিম বুকে নিয়ে ‘আল্লাহ আকবার’ বলে একটি একটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। ছোট জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ শেষ হলে একটু সামনের এগিয়ে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে দীর্ঘ মোনাজাত করে মধ্য জামরায় যাবে। এখানেও ৭টি কঙ্কর একই কায়দায় নিক্ষেপ করবে। নিক্ষেপের পর সামান্য এগিয়ে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আবারও দীর্ঘ মোনাজাত করে বড় জামরায় কঙ্কর মারতে যাবে। নিয়ম মতো এখানেও ৭টি কঙ্কর মারার পর আর দোয়া করতে হবে না, কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে দাঁড়াননি। ইবনে আব্বাস (ু) থেকে বর্ণীত : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করে শেষ করতেন, তখন তিনি চলে যেতেন, দাঁড়াতেন না (ইবনে মাযাহ)। কঙ্কর মারা শেষ হলে তাঁবুতে ফিরে আসবে।



১২ তারিখের কঙ্কর নিক্ষেপ

১২ জিলহজ্জ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় শুরু হয়, যা চলতে থাকে দিবাগত রাতে সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত। ১১ তারিখের মত ১২ তারিখেও তিন জামরাতে, একই নিয়মে, কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। জামরাতুল উলা ও জামরাতুল উস্তায় কঙ্কর নিক্ষেপের পর কেবলামুখী হয়ে যথা সম্ভব দীর্ঘক্ষণ দোয়া করবে। শেষ জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পর হাত উঠিয়ে দোয়া করার বিধান নেই। তবে যদি ১২ তারিখেই কঙ্কর মারা শেষ করার ইচ্ছা পোষণ করলে বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পর মনে মনে অথবা মুখে উচ্চারণ করে বলবে:

اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ حَجًّا مَبْرُوْرًا وَذَنْبًا مَغْفُوْرًا

(উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ’ আলহু হাজ্জান মাবরুরা, ওয়া যানবান মাগফুরা।)

অর্থ: ‘হে আল্লাহ এই হজ্জকে হজে মাবরুর বানাও, ও গুনাহ ক্ষমা করে দাও’

ইবনে ওমর জামরাতুল আকাবায় কংকর মেরে শেষ করে উপরোক্ত দোয়া পড়তেন।

১২ তারিখ কঙ্কর মারার প্রথম ওয়াক্তে প্রচণ্ড ভিড় থাকে, ভিড় এড়াতে একটু দেরি করে বিকালের দিকে যাওয়া ভালো। ১২ তারিখেই কঙ্কর-নিক্ষেপ পর্ব শেষ করা যায়। তবে ১২ তারিখ দিবাগত রাতে মিনায় থেকে গিয়ে ১৩ তারিখ কঙ্কর নিক্ষেপ করতে পারলে ভালো। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ১৩ তারিখে কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করেছিলেন।



পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে,

 ‘فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنْ اتَّقَى

অর্থ: যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দুই দিনে চলে আসে তবে তার কোনো পাপ নেই। আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোনো পাপ নেই, এটা তার জন্য যে তাকওয়া অবলম্বন করে (সূরা আল বাকারা : ২০৩)।

কোনো কোনো হজ্জ কাফেলার নেতাদেরকে দেখা যায় যে তারা ১১ তারিখ মধ্য রাতের পর হাজি সাহেবদেরকে নিয়ে মিনা ত্যাগ করে চলে যান। রাতের বাকি অংশ মক্কায় যাপন করে পরদিন যোহরের পর মক্কা থেকে এসে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন ও আবার মক্কায় চলে যান। এরূপ করাটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আদর্শের বিপরীত। বিশেষ অসুবিধায় না পড়লে এরূপ করা উচিত নয়। আর মিনায় রাত ও দিন উভয়টাই যাপন করা উচিত। কেননা মিনায় রাত্রিযাপন যদি ওয়াজিবের পর্যায়ে পড়ে থাকে তাহলে দিন যাপন সুন্নত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দিন ও রাত উভয়টাই মিনায় যাপন করেছেন।





১৩ তারিখ কঙ্কর নিক্ষেপ

১২ জিলহজ্জ মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে গেলে মিনাতেই রাত কাটাতে হবে এবং ১৩ তারিখ সূর্য ঢলে গেলে তিন জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করতে হবে। তবে যদি কেউ ১২ তারিখ সূর্যাস্তের যথেষ্ট সময় পূর্বে তাঁবু থেকে মিনা ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় এবং অনিচ্ছাকৃত কোনো সমস্যার কারণে যেমন বৃষ্টি-যানজট ইত্যাদি মিনা থেকে বের হওয়ার আগেই সূর্য অস্ত যায় তাহলে মিনায় রাতযাপন করতে হবে না।





বিদায়ি তাওয়াফ

মক্কা ত্যাগের পূর্বে বিদায়ি তাওয়াফ (طواف الوداع) আদায় করে নিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিদায়ি তাওয়াফ আদায় করেছেন ও বলেছেন, বায়তুল্লাহর সাথে শেষ সাক্ষাৎ না করে তোমাদের কেউ যেন না যায় (মুসলিম : হাদিস নং ২৩৫০)।

অন্য হাদীসে এসছে:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইবনে আব্বাস (ু) কে বললেন, লোকদেরকে বলো, তাদের শেষ কর্ম যেন হয় বায়তুল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ, তবে তিনি মাসিক স্রাব-গ্রস্ত নারীর জন্য ছাড় দিয়েছেন (মুসলিম : হাদিস নং ২৩৫১)।





বিদায়ি তাওয়াফের নিয়ম

তাওয়াফের নিয়ত করে হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফের নিয়মে বায়তুল্লাহ সাত বার প্রদক্ষিণ করবে। তাওয়াফ শেষে ইচ্ছে হলে মুলতাযামে চেহারা, বুক, দুই বাহু ও দুই হাত রেখে আল্লাহর কাছে যা খুশি চাইবে। এরপর দু’রাকাত তাওয়াফের সালাত আদায় করে যমযমের পানি পান করবে। বায়তুল্লাহ শরীফ থেকে বের হওয়ার সময় পশ্চাৎমুখী হয়ে বের হতে হবে বলে যে একটি কথা আছে, তা নিতান্তই কুসংস্কার। এরূপ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

































হজ্জের ধারাবহিক কাজ





তারিখ
  

স্থান
  

করণীয় ইবাদত

৮ই যিলহজ্জের পূর্বের কাজ
  

মীকাত
  

(১) মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।

মক্কা
  

(২) কাবা ঘরে উমরার তাওয়াফ করা।

(৩) সাঈ করা।

(৪) চুল কেটে হালাল হওয়া।

হজ্জের ধারাবাহিক কাজ

৮ই যিলহজ্জ (তারউইয়্যার দিন)
  

মিনা
  

নিজ বাসস্থান থেকে ইহরাম বেঁধে হজ্জের নিয়ত করে সূর্যোদয়ের পর মিনায় রওয়ানা হওয়া। সেখানে যুহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের সালাত আদায় করা।

৯ই যিলহজ্জ

(আরাফার দিন)


  

আরাফা ময়দান
  

(১) সূর্যোদয়ের পর আরাফাতে রওয়ানা হওয়া।

(২) যুহরের প্রথম ওয়াক্তে যুহর ও আসর একত্রে পরপর দুই দুই রাকআত করে আদায় করা।

(৩) সূর্যাস্তের পর আরাফাহ ত্যাগ করে মুযদালিফায় পৌছে মাগরিব-এশা একত্রে আদায় করা।

(৪) মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করে প্রথম ওয়াক্তে অন্ধকার থাকতেই ফজর নামায আদায় করা।

(৫) আকাশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে দীর্ঘ সময় দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকা।

(৬) বড় জামারায় নিক্ষেপের জন্য ৭টি কংকর এখান থেকে সংরক্ষন করে রাখা।

১০ই যিলহজ্জ

(ঈদের দিন)
  

মিনা
  

(১) ভোরে মুযদালিফায় হতে মিনায় এসে বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করা।

(২) কুরবানী করা।

(৩) মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করা। অতঃপর ইহরামের কাপড়  পরিবর্তন করে সাধারণ পোষাক পরিধান করা।

মক্কা
  

(৪) তাওয়াফে যিয়ারত করা। এদিন না পারলে এটি ১১ বা ১২ তারিখেও করা যাবে এবং তৎসঙ্গে সাঈ করা।

১১ই যিলহজ্জ (আইয়ামে তাশরীক)

১ম দিন
  

মিনা
  

(১) দুপুরের পর সিরিয়াল ঠিক রেখে প্রথমে ছোট, মধ্যম ও এর পরে বড় জামরায় প্রত্যেকটিতে ৭টি করে (৩ ী ৭) মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ করা।

(২) মিনায় রাত্রি যাপন করা

১২ই যিলহজ্জ (আইয়ামে তাশরীক)

২য় দিন
  

মিনা
  

(১) পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী ৩টি জামরায় ৭+৭+৭=২১টি কংকর নিক্ষেপ করা। দুপুরের আগে কংকর নিক্ষেপ না করা।

(২) সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা। তা না পারলে দিবাগত রাতও মিনায় অবস্থান করা।

১৩ই যিলহজ্জ (আইয়ামে তাশরীক)

৩য় দিন
  

মিনা
  

(১) যারা ১২ই যিলহজ্জ মিনায় রাত্রি যাপন করছে তারা ১৩ই যিলহজ্জ দুপুরের পর পূর্ব দিনের নিয়মেই ৭টি করে (৩ ী ৭) মোট ২১ টি কংকর নিক্ষেপ করবে। অতঃপর মিনা ত্যাগ করবে।

অতঃপর
  

মাক্কা
  

দেশে ফেরার পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ করা। এটা ছুটে গেলে দম দিতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু (ﷺ) বলেছেন “কাবাঘরে বিদায়ী তাওয়াফ” করা ছাড়া যেন কেউ দেশে ফিরে না যায়” (মুসলিম)। তবে হায়েযওয়ালী মেয়েদের বিদায়ী তাওয়াফ করা লাগবে না। ইবনে আব্বাস (ু) হতে বর্ণিত “হায়েযওয়ালী মেয়েদেরকে এ বিষয়ে রুখসত দেয়া হয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)



মক্কা শরীফে দোয়া কবূলের স্থানসমূহ

১.      মাতাফ (তাওয়াফ করা স্থান)

২.      মুলতাযাম (বায়তুল্লাহ শরীফের দরজায় ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান)

৩.     মীজাবে রহমত (হাতীমের মধ্যে বাইতুল্লাহর ছাদে পানি পড়ার নালার নীচে)

৪.      হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে

৫.     বায়তুল্লাহ শরীফের ভিতরে

৬.      মাকামে ইবরাহীমের পিছনে

৭.     সাফা-মারওয়ার পাহাড়দ্বয়ের উপরে

৮.     উপরোক্ত পাহাড়দ্বয়ের মাঝামাঝি দৌড়ানোর জায়গায়

৯.      জাবালে রহমতের কাছে

১০. জাবালে নূর বা হেরা পর্বতের গুহা

১১.  গারে ছওর

১২.  আরাফাতের ময়দানে

১৩. মুযদালিফার ময়দানে

১৪.  মিনার মসজিদসমূহে ও ময়দানে

১৫. কংকর মারার স্থানে

১৬.  জমজমের নিকটে

১৭. মাওলিদুন্ নবী (রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মস্থান)।



যিয়ারতে মদিনা



মসজিদে নববী যিয়ারতের সাথে হজ্জ বা উমরার কোন সম্পর্ক নেই। এটা আলাদা ইবাদত। বছরের যে কোন সময় এটা করা যায়। এটা হজ্জের রুক্ন, ফরয বা ওয়াজিব কিছুই নয়। এটা স্বতন্ত্র মুস্তাহাব ইবাদত। একটি কথা আমাদের মাঝে বহুল প্রচলিত আছে, সেটা হল- “যে ব্যক্তি হজ্জ করল অথচ আমার যিয়ারতে এল না সে আমার প্রতি জুলুম করল।” এ বাক্যটি নবী (ﷺ) এর কোন হাদীস নয়। এটি মওদূ অর্থাৎ মানুষের তৈরী বানোয়াট কথা।

মসজিদে নববী যিয়ারতের সুন্নত তরীকাগুলো হল:

(১) পবিত্র মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়তে মদীনা মুনাওয়ারা পৌঁছে সালাত আদায়ের পর নবীজির (ﷺ)কবর যিয়ারত করা। কিন্তু সফরটি কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে হবে না। কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে লম্বা ও কষ্টসাধ্য সফর করা শরীয়তে জায়েয নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ঃ

لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ -صلى الله عليه وسلم- وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى

অর্থাৎ, (ইবাদতের নিয়তে) মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা ব্যতীত কঠিন ও কষ্টসাধ্য সফরে যেও না। (বুখারী ১১৮৯)

এ হাদীসটি প্রমাণ করে যে, কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে লম্বা ও কঠিন সফরে যাওয়া বৈধ নয়। কিন্তু সফররত অবস্থায় পথিমধ্যে  কোন আত্মীয় বা কোন অলী-আওলিয়ার কবর সামনে পড়লে যিয়ারত করা যাবে। মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হাদীসে আছে ঃ

صَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ

অর্থাৎ, আমার এ মসজিদে নববীতে সালাত আদায় অপরাপর মসজিদের এক হাজার সালাতের চেয়েও উত্তম। (ইবনে মাজাহ- ১৪০৪)

(২) মুস্তাহাব হল প্রথমে ডান পা আগে দিয়ে আল্লাহর নাম স্মরণ করে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি দরুদ পাঠ করা। আল্লাহ যেন তাঁর রহমতের সমস্ত দরজা খুলে দেন সে জন্য নিুোক্ত দোয়া পাঠ করা।

بِسْمِ اللِه، والصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ ، اللّهُمَّ اغْفِرْلِي ذُنُوْبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابِ رَحْمَتِكَ[২].

(উচ্চারণ: বিসমিল্লাহে ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আ’লা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগ ফিরলী যুনুবী ওয়াফতাহ্লী আবওয়াবে রাহ্মাতিকা)।

এ দোয়াটি অন্যান্য যে কোন মসজিদে প্রবেশের সময়ও পড়া যায়।

মসজিদে প্রবেশের পর, বসার পূর্বে, তাহিয়াতুল মাসজিদের দু’ রাকাত সালাত আদায় করুন। হাদিসে এসেছে,

 ‘إذا دخل أحدكم المسجد، فلا يجلس حتى يصلى ركعتين

Ñতোমাদের মধ্যে যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন দু’রাকাত সালাত আদায়ের পূর্বে না বসে’ (বুখারি, মুসলিম)। রাওজাতুল জান্নাতে মসজিদের মেহরাবের কাছে সাদা ও সবুজ কার্পেট বিছানো জায়গায় সালাত আদায় করতে পারলে ভালো। কেননা রওজা শরীফ পবিত্রতম।

(৩) সালাত আদায়ের পর কবর যিয়ারত করতে চাইলে আদব, বিনয়-নম্রতা ও নিচু স্বরে নবী (ﷺ) এর কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে এভাবে তাঁকে সালাম দেয়া:

السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ - اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ - اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

(উচ্চারণ: আস্সালামু আলাইকা আয়্যূহান্ নাবিয়্যু ওয়া রাহ্মাতুল্লাহে ওয়া বারকাতুহু, আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আ'লে মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীম, ওয়াআলা আলে ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারেক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আ'লে মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীম, ওয়াআলা আলে ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ)।



অথবা এতদসঙ্গে এভাবেও বলা যেতে পারে:

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ

(উচ্চারণ: আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহে ওয়া রাহ্মাতুল্লাহে ওয়া বারকাতুহু)।



রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই বলেছেন ঃ

مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلاَّ رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ

অর্থাৎ “যে কেউই আমাকে সালাম দেয় তখনই আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহকে ফেরত দেন, অতঃপর আমি তার সালামের জবাব দেই।” (আবূ দাউদ ২০৪১)

(৪) এরপর একটু ডানে অগ্রসর হলেই আবূ বকর (ু) এর কবর। তাকে সালাম দিয়ে  তাঁর জন্য দোয়া করা। আর একটু  ডানদিকে এগিয়ে গেলে উমর (ু) এর কবর। তাকেও সালাম দিয়ে তাঁর জন্য দোয়া করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সহ উক্ত তিনজনকে এভাবেও সালাম দেয়া যেতে পারে:

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَارَسُوْلَ اللهِ - اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا أَبَا بَكْرٍ - اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ

(উচ্চারণ: আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহে, আস্সালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকর, আস্সালামু আলাইকা ইয়া উমারাবনিল খাত্তাব)।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশী না বলাই উত্তম।

(৫) যিয়ারতের সময় অত্যন্ত সাবধান থাকতে হবে যে, নবী (ﷺ) এর কাছে কোন সাহায্য চাওয়া যাবে না। রোগমুক্তি বা কোন মকসূদ পূরণের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বা মৃত কবরবাসীদের কাছে কোন কিছু চাওয়া যায় না। চাইতে হবে শুধু আল্লাহর কাছে। কবরবাসীদের কাছে চাইলে শির্ক হয়ে যাবে। শির্ক করলে সব নেক আমল বাতিল হয়ে যায়, বেহেশত হারাম হয়ে যায়। ফলে জাহান্নামে চিরকাল থাকতে হবে। তবে তাওবাহ করলে আল্লাহ মাফ করে দেবেন। তাছাড়া কবর ও রওজার দেয়াল বা গ্রীল বা অন্য কিছু ভক্তি ভরে স্পর্শ করা যাবেনা। কুরআন ও হাদীসে যা আছে শুধু তাই করতে হবে, এর চেয়ে কম-বেশী কিছু করা যাবে না।

(৬) মহিলাদের জন্য নবী (ﷺ) এর কবর যিয়ারত জায়েয নয়, তাছাড়া অন্য কোন কবরও না। নবীজি (ﷺ)বলেছেন ঃ

لَعَنَ اللهُ زَائِرَاتِ القٌبُوْرِ

“যে সব মহিলা কবর যিয়ারত করবে তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হয়।” (তিরমিযী ৩২০)

মহিলারা মসজিদে নববীতে নামায পড়তে যাবে এবং নিজ জায়গায় বসেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সালাম দিবে। যে কোন জায়গা থেকে সালাম পাঠালেও তা নবী (ﷺ) এর রওজায় পৌঁছিয়ে দেয়া হয়।

(ক)  হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন:

لاَ تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا وَلاَ تَجْعَلُوا قَبْرِيْ عِيدًا وَصَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُمْ

অর্থাৎ, তোমাদের বাড়ীগুলোকে কবর সদৃশ বানিও না এবং আমার কবরকে উৎসবের কেন্দ্রস্থল করো না। আমার প্রতি তোমরা দুরূদ ও সালাম পেশ কর। কেননা যেখানে থেকেই তোমরা দুরূদ পেশ কর তাই আমার কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। (আবূ দাঊদ ২০৪২)

(খ) অন্য আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন:

إِنَّ للهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِينَ فِي الأَرْضِ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ

অর্থাৎ, আল্লাহ তা‘আলার একদল ফেরেশতা রয়েছে যারা পৃথিবী জুড়ে বিচরণ করছে। যখনই আমার কোন উম্মত আমার প্রতি সালাম জানায় ঐ ফেরেশতারা তা আমার কাছে তখন পৌঁছিয়ে দেয়। (নাসায়ী  ১২৮২)

(৭) সম্মানিত হাজী ভাই! যেহেতু আল্লাহ মদীনা মুনাওয়ারায় পৌঁছার তাওফীক দিয়েছেন সেহেতু পুরুষদের জন্য সুন্নাত হল “জান্নাতুল বাকী” কবরস্থান যিয়ারত করা। এটা মদীনার কবরস্থান। সেখানে শায়িত আছেন উসমান (ু) সহ অসংখ্য সাহাবায়ে কিরাম। হামযা (ু) সহ উহুদ যুদ্ধের শহীদগণ উহুদ প্রান্তে শায়িত আছেন। যিয়ারতের সময় তাদের সকলের জন্য দোয়া করা। তাদের কবর যিয়ারতের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিম্নের এ দোয়াটি পড়তেন যা সহীহ মুসলিমে আছে:

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاূءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ يَرْحَمُ اللهُ المستقدمين منا والمستأخرين نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ

(উচ্চারণ: আস্সালামু আলাইকুম আহলাদ্ দাইয়্যার, মিনাল মু’মীনিনা ওয়াল মুসলিমীন, ওয়া ইন্না ইনশা’আল্লাহু বিকুম লা’হিকুন, ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাকদিমীনা মিন্না ওয়াল মুসতা’খিরীন, নাসআ’লুল্লাহা  লানা ওয়ালাকুমুল আ’ফিয়া)।



কবর যিয়ারতে আমাদেরকে উৎসাহিত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

زُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُكُمُ الآخِرَةَ

অর্থ: “তোমরা কবর যিয়ারত কর, কেননা এ যিয়ারত তোমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।” (মুসলিম ৯৭৬)

কবর যিয়ারতের মূল উদ্দেশ্য হল, আখেরাতের কথা স্মরণ করা এবং দোয়ার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির উপকার করা। অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে যে, কোন অবস্থাতেই মৃত ব্যক্তির কাছে কিছুই চাওয়া যাবে না। চাইলে শির্ক হয়ে যাবে আর শির্ক ঈমান থেকে বহিস্কার করে দেয়। ফলে সে আর মুসলিম থাকে না। অতএব যাই আপনি চাইবেন তা শুধু আল্লাহর কাছেই চাইবেন।

(৮) মদীনা শরীফ গমনকারীদের জন্য মুসতাহাব হল “মসজিদে কুবা” যিয়ারত করা এবং সেখানে সালাত আদায় করা। কেননা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কিছুতে আরোহণ করে বা পায়ে হেঁটে যখনই এখানে আসতেন তখন তিনি এখানে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন ঃ

مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِه، ثُمَّ أَتٰى مَسْجِدَ قُبَاءَ فَصَلَّى فِيهِ صَلاَةً كَانَ لَه، كَأَجْرِ عُمْرَةٍ

অর্থ: “যে ব্যক্তি তার বাড়ীতে পবিত্রতা অর্জন করল, অতঃপর মসজিদে কুবায় এসে সালাত আদায় করল সে একটি উমরা করার সাওয়াব অর্জন করল।” (ইবনে মাজাহ ১৪১২)



















মক্কা মুকাররামাতে যিয়ারতের স্থানসমূহ

১.     জাবালে ছওর বা ছওর পর্বত: এরই শীর্ষদেশে হিজ্জরতের রাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু বকর সিদ্দিীকসহ (ু) আশ্রয় নিয়েছিলেন। মক্কা মুকাররামাহ্ হতে এ পবিত্র স্থানটি প্রায় ৩ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত।

২.     জাবালে নূর বা হেরা পর্বতের গুহা: মক্কা থেকে মিনায় যেতে হাতের বায়ে পড়ে এই পাহাড়। জাবালে নূরের শীর্ষদেশে প্রসিদ্ধ হেরা গুহা অবস্থিত। এখানে মহানবী (ﷺ) এর ধ্যান-মগ্নাবস্থায় জিবরাঈল (ঁ) সর্বপ্রথম ওহী নিয়ে আগমন করেন।

৩.    জান্নাতুল মুয়াল্লা: ইহা মক্কার কবরস্থান। মসজিদুল হারাম থেকে উত্তর দিকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে বহু সাহাবী (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুম), বিশেষ করে উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদিজা (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহা) এর কবর অবস্থিত।

৪.     রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান।

৫.    উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদিজা (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহা) এর বাড়ি, ফাতিমা (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহা) এর জন্মস্থান।

৬.     দারুল আরকাম: ইসলামের প্রথম প্রচার কেন্দ্র। মুসলিম জাহানের খলিফা হযরত ওমর (ু) এখানে ইসলাম কবুল করেন।

৭.    মসজিদে জ্বিন : কাবাগৃহ থেকে পূর্বদিকে জান্নাতুল মুয়াল্লার কাছে এটি অবস্থিত। এখানে জ্বিনরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে কুরআন শ্রবণ বরেছিল। এখানে সূরায়ে জ্বিন অবতীর্ণ হয়।

৮.    মসজিদে আয়েশা (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহা): মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ৩ মাইল উত্তরে হারাম সীমানার  বাইরে তানঈম নামক স্থানে অবস্থিত। উমরা পালনকারীগণ এখানে এসে সাধারণতঃ উমরাহ্র ইহরাম বেঁধে থাকেন।

৯.     মসজিদে বেলাল (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু) : এটি জাবালে আবু কোবায়সের উপর অবস্থিত।

১০. মসজিদে খালেদ (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু)।

১১.  মসজিদে খায়েফ:  মিনার সবচেয়ে বড় মসজিদ।

১২.  মসজিদে মাশায়ারিল হারাম: মুযদালিফায় অবস্থিত একটি মসজিদ।

১৩. মসজিদে নামিরা: আরাফাত ময়দানের একটি বড় মসজিদ। এ মসজিদ থেকেই আরাফাতের দিবসে খুতবা পাঠ করা হয়।

১৪.  মুহাস্সার: মুযদালিফা সংলগ্ন একটি জায়গা। এ পথ দিয়ে দ্রুত অতিক্রম করতে হয়।এখানেই আল্লাহ তা’আলা আসহাবে  ফীলের উপর আযাব অবতীর্ণ করেছিলেন।

১৫. জাবালে রহমত: আরাফাতে অবস্থিত একটি পাহাড়।

মদীনা মুনাওয়ারা যিয়ারতের স্থানসমূহ

১.     জান্নাতুল বাকী: ইহা মসজিদে নববীর পূর্ব পাশ্বে অবস্থিত মদীনা শরীফের কবরস্থান। এখানে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহা), হযরত ফাতেমা (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহা) এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আরো আটজন সহধর্মীনি (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুন্না) সহ ১০ হাজারের বেশি সাহাবায়ে কেরাম (রজিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুম) কবরে শায়িত আছেন।

২.   জাবালে ওহুদ: এখানে শোহাদায়ে ওহুদের কবর, বিশেষ করে সাইয়্যেদুশ-শোহাদা হযরত হামযা (ু) কবর অবস্থিত।

৩.  মসজিদে কোবা: মসজিদে নববী থেকে ৩ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। এ মসজিদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহবায়ে কেরামকে নিয়ে নিজ হাতে নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদে কোবায় দু’রাকাত সালাত আদায় করা ১ বার উমরা পালনের সমান সওয়াব।

৪.   মসজিদে কেবলাতাইন: এখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর কেবলা পরিবর্তনের আয়াত নাযিল হয়েছিল।

৫.  মসজিদে ফাত্হ

৬.   মসজিদে গামামাহ

৭.  মসজিদে আবু বকর

৮.  মসজিদে আলী

৯.   মসজিদে নূর

১০.        মসজিদে বনী হারাম









বাড়ি প্রত্যাবর্তনের আদব প্রসঙ্গ

বাড়ি প্রত্যাবর্তনের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নতের যথাযথ পায়রবি করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে দ্বীনকে স্বচ্ছ-শুভ্র আকারে রেখে গেছেন তা প্রচার ও প্রসারে সর্বশক্তি প্রয়োগের মনোবৃত্তি নিয়ে, কখনো কোনো কাজে যেন সুন্নতে রাসূল পরিত্যাগ না হয় সে ধরনের মানসিকতা নিয়ে মদিনা থেকে দেশে ফিরে আসা। দেশে ফেরার পূর্বে মসজিদে নববীতে দু’রাকাত বিদায়ী সালাত আদায় করা শরিয়ত সম্মত নয়। হাদিসে ও সাহাবায়ে কেরামের কর্মে এ ধরনের কোনো সালাত পাওয়া যায় না। বিদায়ী যিয়ারত বলতেও কোনো কিছু নেই। বিদায়ের পূর্বে রওজা মুবারকে উপস্থিত হয়ে সালাম নিবেদন করে দ্বীন-দুনিয়ার প্রয়োজনের জন্য, হজ্জ ও যিয়ারত কবুল এবং নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য দোয়া করার ব্যাপারে কোনো কোনো বইয়ে যে পরামর্শ আছে তারও কোনো ভিত্তি নেই।

সফর থেকে ফেরার পর নিজ মহল্লা বা শহর দৃষ্টিগোচর হলে এই দোয়া পড়বে-

آئِبُوْنَ، تَائِبُوْنَ، عَابِدُوْنَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ.

(উচ্চারণ: আ’য়িবুন, তা’য়িবুন, আ’বিদুন, লিরাব্বিনা হামিদুন)।

অর্থ: প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতকারী ও আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী (মুসলিম)।

মহল্লার মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত সালাত আদায় করবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন, তিনি মসজিদ দিয়ে শুরু করতেন, তিনি সেখানে দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন (মুসলিম)।





এলাকাবসীর করণীয়

হাদিসে এসেছে- ইবনে ওমর (ু) থেকে বর্ণিত,  তুমি যখন হাজির সাথে সাক্ষাৎ করবে তাঁকে সালাম দেবে, তাঁর সাথে মুসাফা করবে, ও তাঁকে তোমার গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলবে, তার ঘরে প্রবেশের পূর্বেই। কেননা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (আহমদ)





















































খাদ্য ওপানীয়



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

পানি
  

মুইয়া
  

নাস্তা
  

ফতুর

মিষ্টি পানি
  

মুইয়া হেলু
  

দুপুরের খাবার
  

গাদা

কলের পানি
  

মুইয়া মাকিনা
  

রাতের খাবার
  

আশা

বৃষ্টির পানি
  

মুইয়া মাতার
  

হুক্কা
  

শিশা

বরফের পানি
  

মুইয়া মুসাল্লায
  

সিগারেট
  

সিজারা

চাউল/ভাত
  

রুয
  

চিনি
  

সুগ্গার

গোশত
  

লাহাম
  

চা
  

শাই

গরুর গোশত
  

লাহাম বাকার
  

কফি
  

গাহওয়া

মুরগীর গোশত
  

লাহাম দাজাজ
  

পরাটা
  

মোতাব্বাখ

খাসীর গোশত
  

লাহাম মায়েজ
  

মাখন
  

যেব্দা

উটের গোশত
  

লাহাম জামালী
  

পনীর
  

জুবুন

 মেষ/দুম্বার গোশত
  

লাহাম গানাম
  

তেল
  

জেত

ভুনা গোশত
  

লাহাম মাশ্বী
  

সালুন/ তরকারী
  

ইদাম

বিরিয়ানী
  

রুয মাশ্বী
  

আটা
  

দাগ্গি

সাদা ভাত
  

রুয সবলুল
  

কিমা
  

গ্মাফরুম

পোলাও
  

রুয বোখারী
  

পান
  

তাম্বুল

দুধ
  

হালিব
  

চুন
  

নূরা

দধি
  

লাবান
  

মাথা
  

রাস্

রুটি
  

খুবয/আইশ
  

কলিজা
  

কিব্দ

আলু গোশত
  

লাহাম বাতাতিস
  

গুরদা
  

গালব

পিপাসিত
  

আতশান
  

ক্ষধার্ত
  

জওআন

ছোট মাছ
  

সামাক
  

সমুদ্রের মাছ
  

হুতুল বাহার

মাছ
  

হুত
  

নদীর মাছ
  

হুতুল নাহার



মসলা জাতীয়



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

সরিষার তৈল
  

যায়ত্ খারদাল
  

মসল্লা
  

আবযার/মাসাল্লাহ্

মরিচ
  

ফিল্ফিল
  

লবণ
  

মিলাহ্

রসুন
  

সুম
  

পিঁয়াজ
  

বাসাল

লবঙ্গ
  

গোরন ফুল
  

এলাচী
  

হেল

জিরা
  

কামনুন
  

দারুচিনি
  

গেরফা

আদা
  

জানজাবিল
  

হলুদ
  

হোরদ





তরি তরকরী



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

শাকসব্জী
  

খুদরাওয়াত
  

টমেটো
  

তামাতেম

সব্জীওয়ালা
  

খুদারী
  

বাঁধা কটি
  

কুরুম্বা

মুদী
  

বাক্কাল
  

শশা
  

খিয়ার

মুদী দোকান
  

বাক্কালা
  

ডাল
  

আদাস

সীম, বীট
  

ফুল
  

ঢেড়শ
  

বামিয়া

বেগুন
  

বাদিন্জান
  

শালগম
  

শালজম

মূলা
  

ফিজিল
  

পালং শাক
  

সিল্ক

গোল আলু
  

বাতাতেস
  

লেবু
  

লেয়মুন

ফল জাতীয়



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

বাদাম
  

লওয
  

তরমুয
  

হাব্হাব্

খেজুর
  

তামুর
  

নারিকেল
  

জুযুল হিন্দ

আম
  

মাংগা
  

আনারস
  

আনানাস

আপেল
  

তোফ্ফাহ্
  

আংগুর
  

এনাব্

কমলালেবু
  

বুরতুগাল
  

বেদানা
  

রুম্মান

মাল্টা
  

বোরতগাল
  

পাকা খেজুর
  

রুতাব

কলা
  

মওয
      



দিক: দিনের নাম: সময়



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

পূর্ব
  

মাশরেক
  

শনিবার
  

ইয়াওমুস সাবত

পশ্চিম
  

মাগরেব
  

রবিবার
  

ইয়াওমুল আহাদ

উত্তর
  

শিমাল
  

সোমবার
  

ইয়াওমুল এতনিন

দক্ষিণ
  

জুনুব
  

মঙ্গলবার
  

ইয়াওমুত্  তুলুতু

এখানে
  

হিনা
  

বুধবার
  

ইয়াওমুল আরবা

ওখানে
  

হুনাক
  

বৃহস্পতিবার
  

ইয়াওমুল খামিস

দূরে
  

বাঈদ
  

শুক্রবার
  

ইয়াওমুল জুমুআ

কাছে
  

কারিব
  

দিন
  

ইয়াইম/নাহার

আমার কাছে
  

এন্িদ
  

রাত্রি
  

লাইল

আমার থেকে
  

মিন্নি
  

তোমার কাছে
  

এনদাক

আমার
  

লী/হাগ্গী
  

আগামীকাল
  

বুকরা

বৎসর
  

সানা/আম
  

পরশু
  

বাদ বুকরা

মিনিট
  

দাগিগা
  

গতকল্য
  

আমছ্

মাস
  

শাহর
  

ঘড়ি/ঘন্টা
  

সা’আহ



পেশা ও চিকিৎসা সম্পর্কিত



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

বাদশাহ
  

মালিক
  

প্রাথমিক চিকিৎসা
  

ইস্আফ

বিচারক
  

কাযী
  

হাসপাতাল
  

মুস্তাশ্ফা

দর্জি
  

খাইয়াত
  

ক্লিনিক
  

মুস্তাউসিফ

কর্মচারী
  

মুআয্যফ
  

ফার্মেসী
  

সাইদালা

দারোয়ান
  

বাওয়াব
  

ঔষধ
  

দাওয়া

চৌকিদার
  

হারেছ
  

বড়ি
  

হবুব

শ্রমিক
  

উম্মাল
  

ব্যথা
  

আলাম

ইঞ্জিানিয়ার
  

মুহান্দিছ
  

রোগী
  

মারীদ

ডাক্তার
  

তাবীব
  

রোগ
  

মারাদ

নার্স
  

মুমাররিদা
  

আরোগ্য
  

শেফা













সর্বনাম



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

আমি
  

আনা
  

তোমরা (পুং)
  

আনতুম

আমরা
  

নেহ্না
  

তোমরা (স্ত্রী)
  

আনতুন্না

তুমি (পুং)
  

এন্তা
  

 সে (পুং)
  

হুয়া

তুমি (স্ত্রী)
  

এন্তি
  

 সে (স্ত্রী)
  

হিয়া

তোমরা দুইজন
  

আনতুমা
  

তাহারা (স্ত্রী)
  

হুন্না



ব্যবহারিক দ্রব্যাদি



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

চায়ের কাপ
  

ফিনজান
  

সুরমা
  

কুহল

ট্রে
  

তিফসি
  

ছুরি
  

সিক্কিন

চামচ
  

মিলাগা
  

স্যুটকেস/ব্যাগ
  

শানতা/হাকিবা

পেট্রোল
  

বেনজিন
  

তালা
  

গোফল

পাখা
  

র্মেওয়াহা
  

টেপরেকর্ডার
  

মোসাজ্জাল

মগ
  

মোগরাব
  

রেডিও
  

রাদিও

গ্লাস
  

কাছা
  

টেলিফোন
  

তিলফুন

পপাতিল
  

গেদের
  

টেপ বা ফিতা
  

শারিত্

বালতি
  

ছতিল
  

ডিস্ক রেকর্ড
  

উস্তোয়ানা

সাবান
  

ছাবুন
  

রিফ্রেজারেটর
  

তালাজ্জা

ছাতা
  

শামছিয়া/মিজাল্লা
  

ব্যাটারী
  

বাতারি

আয়না
  

মেরাআ
  

কাগজ
  

ওয়ারাগ

চিরুনী
  

মিশত্
  

কলম
  

গলম

বাক্স
  

সুন্দুক
  

চিঠি
  

কিতাব

চাবি
  

মিফতাহ
  

ম্যাপ
  

খারিতা

স্কেল
  

মিছতারা
  

মোটর গাড়ী
  

সাইয়ারা

বিমান
  

তাইয়ারা
  

টাকা-পয়সা
  

ফুলূস



আতœীয়-স্বজন



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

পিতা
  

আবুইয়া
  

দাদা/নানা
  

জাদ্দি

মা
  

উম্মি
  

দাদী/নানী
  

জাদ্দাতি

বোন
  

উখতি
  

মেয়ে
  

বিন্ত

ভাই
  

আখুইয়া
  

ছেলে
  

ওয়ালাদ

চাচা
  

আম্মি
  

স্ত্রী/স্ত্রী লোক
  

হারিম/হুরমা

চাচী/ফুফু
  

আম্মাতি
  

রক্ত সম্পর্কীয় আতœীয়
  

মোহ্রেম

মামা
  

খালি
  

মিষ্টার
  

আস- সাইয়েদ

বন্ধু
  

রফিগ
  

মিসেস
  

আস-সাইয়েদা

















ক্রিয়া কর্ম, প্রশ্নবোধক ও বাক্যাংশ



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

কত
  

কাম্
  

অর্ধেক
  

নূছ

কে?
  

মিন্/মান্
  

কিছুনা
  

মালিশ

কোথায়
  

ফিন
  

তাই নয় কি?
  

মুশকিদা

কখন
  

ইমতি
  

এখন না
  

লিছ্ছা

এখন
  

দাহিন
  

বাইরে
  

র্বারা

আস
  

তাআল
  

ভিতরে
  

জুওয়া

চড়
  

আরকাব/আতলা
  

কম/অল্প
  

গালিল

পান কর
  

আশ্রাব
  

বেশি
  

কাতীর

খাও
  

কুল
  

কত
  

গাদ্দেশ

উঠাও
  

শিলু
  

ধর
  

আমছাক্

নামাও
  

নায্যেল
  

উঠ
  

গুম

যাও
  

রোহ
  

কাট
  

গত্তিউ

অল্প কিছু
  

শুয়াই
  

দেখ
  

শুফ

শোন
  

এসমা
  

দাও
  

গিফ

রাখ
  

হোত্তা
  

যাও
  

আম্শী

আন
  

হাতে
  

বস
  

এজলেস

সামনে সামনে
  

গোদ্দাম গোদ্দাম
  

নিদ্রা
  

নওম

পিছনে সর
  

ওরে ওরে
  

ওজন কর
  

ওয়ায্যেন

উপরে
  

ফাওগ
  

খরিদ কর
  

এশতারি

নীচে
  

তাহাত
  

বিক্রি কর
  

বেউ

ডানে
  

ইয়ামিন
  

যবেহ কর
  

আদ্বাহ্

বাঁয়ে
  

ইয়াছার
  

পরিধান কর
  

আলবাছ্

সমান সমান
  

সেওয়া সেওয়া
  

টাকা ভাঙ্গানোর দোকান
  

র্সারাফ/মাসরাফ

আছে
  

ফি
  

কসাই
  

কাস্সাব

নাই
  

মাফি
  

নাপিত
  

হাল্লাগ





ভ্রমণ সংক্রান্ত



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

ভ্রমণ
  

সিয়াহা, সফর
  

পুলিশ
  

বুলিছ, শুরতী

বিমান বন্দর
  

মাতার
  

কুলি
  

হাম্মাল/আবাশ

লাউঞ্জ/কাউন্টার
  

সালাহ্
  

মোটরকার
  

সাইয়ারা

অনুসন্ধান
  

ইস্তিলামাত
  

মোটরগাড়ী/বাস
  

হাফেলা/নাকেলা

ব্যাংক
  

মাস্রাফ
  

টেক্সী
  

তাক্সী

বিমান
  

তাইয়ারা
  

ড্রাইভার
  

সায়েগ

পাসপোর্ট
  

জাওয়ায
  

রাস্তা
  

তরিগ

ভিসা
  

তাশিরা
  

ওভার ব্রীজ
  

কুবরী

কাস্টম
  

জুমরুক
  

টাকার ভাংতি
  

তাফরীগ















হোটেল, রেষ্টুরেন্ট



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

হোটেল
  

ফুন্দুক
  

বাবুর্চি
  

তাব্বাখ

রেষ্টুরেন্ট
  

মাতআম
  

বাজার
  

ছুগ

ম্যাসিয়ার
  

সুফরজি
  

গোসলখানা
  

হাম্মাম







গণনা



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

১-এক
  

ওয়াহেদ
  

৩০-ত্রিশ
  

তালাতিন

২-দুই
  

এতনিন
  

৪০-চল্লিশ
  

আরবাঈন

৩-তিন
  

তালাতা
  

৫০-পঞ্চাশ
  

খামছিন

৪-চার
  

আরবা
  

৬০-ষাট
  

সিত্তিন

৫-পাঁচ
  

খামছা
  

৭০-সত্তর
  

সাবঈন

৬-ছয়
  

সিত্তা
  

৮০-আশি
  

তামানিন

৭-সাত
  

সাবআ
  

৯০-নব্বই
  

তিসঈন

৮-আট
  

তামানিয়া
  

১০০-একশ
  

মিয়াহ্

৯-নয়
  

তিসআ
  

২০০-দুইশ
  

ইময়াতাইন

১০-দশ
  

আশারা
  

৩০০-তিনশত
  

তুলুতু মিয়াহ

১১-এগার
  

এহাদাশ্রা
  

৪০০-চারশত
  

আরবা মিয়াহ

১২-বার
  

এতনাশারা
  

৫০০-পাঁচশত
  

খামছা মিয়াহ

১৩-তের
  

তালাতাশারা
  

১০০০-এক হাজার
  

আল্ফ্

১৪-চৌদ্দ
  

আরবাতাশারা
  

২০০০-দুই হাজার
  

আল্ফাইন

১৫-পনের
  

খামসাতাশারা
  

৩০০০-তিন হাজার
  

তুলুতু আলফ্

১৬-ষোল
  

ছিত্তাতাশারা
  

৪০০০-চার হাজার
  

আরবা আল্ফ্

১৭-সতের
  

সাবআতাশারা
  

৫০০০-পাঁচ হাজার
  

খামছা আল্ফ্

১৮-আঠার
  

তামানিয়াশারা
  

প্রথম
  

আওয়াল

১৯-উনিশ
  

তিসআতশারা
  

শেষ
  

আখের

২০-বিশ
  

এশরিন
  

মধ্যে
  

ওয়াসাত



পোশাক জাতীয়



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

কাপড়
  

গুমাশ
  

মশারী
  

নামুসীয়া

পাজামা
  

সিরওয়াল
  

খাটিয়া
  

খাশাব

জায়নামাজ
  

সুজ্জাদা
  

গেঞ্জি
  

ফান্নিলা

জামা
  

কামীস
  

গাইড
  

দলীল

প্যান্ট
  

বানতালুন
  

মু’আল্লিম
  

মুতাওয়ীফ

তোয়ালে
  

ফুতা
  

অবতরণ কর
  

তানায্যুল

রুমাল
  

মিন্দিল
  

ট্যাক্স
  

দরীবা

স্যান্ডেল
  

শিব্শিব্
  

বাংলাদেশ
  

বাংলাদেশ

বালিশ
  

মোখাদ
  

বাংলাদেশ দূতাবাস
  

বাংলাদেশ সাফারা







কথোপকথন



বাংলা
  

আরবী
  

বাংলা
  

আরবী

সুপ্রভাত
  

সাবাহাল খায়ের/ সাবাহ নূর
  

আমার অনেক কাজ
  

ইন্দ শুগল কাতির

শুভ সন্ধ্যা
  

মাসাআল খায়ের/ মাসা নূর
  

সামনে চলুন
  

গুদ্দাম গুদ্দাম

কেমন আছেন?
  

কেফ্ হালাক/ কেফ্ সিহ্হা
  

পিছনে সরুন
  

ওরে ওরে

আলহামদুলিল্লাহ্, আমি ভাল
  

কুওয়াইয়েছ আলহামদুলিল্লাহ
  

এই তরমুজটি কত?
  

বেকাম হাব্হাব হাযা?

আপনার নাম কি?
  

এশ্ এছমাক?
  

এর দাম দুই রিয়াল
  

হাযা বেরিয়ালাইন

আমার নাম মুহাম্মদ .....
  

ইস্মি মুহাম্মদ .....
  

এক কথাতো?
  

ওয়াহেদ কালাম?

আপনি কোন দেশের লোক
  

মিন আইয়ে বালাদ এন্তা
  

দেড় রিয়াল শেষ কথা
  

রিয়াল ওয়াহেদ ওয়ান্নুছ আখের কালাম

আমি বাংলাদেশী
  

আনা মিন বাংলাদেশ
  

কেটে দেখিয়ে দেবে তো?
  

আলাস্ সিক্কীন?

আমি বাংলাদেশী তাঁবু খুঁজছি
  

আবগা খিমা বাংলাদেশ
  

নিশ্চয় কেটে দেখিয়ে দেব?
  

ওয়াল্লাহে আলাস্ সিক্কীন

আপনার মুআল্লিম কে
  

মিন্ মুতাওয়ায়েফ কে?
  

এটা খারাপ তরমুজ
  

হাযা হাব্হাব বাত্তাল

আমার মুআল্লিম যায়দ
  

মুতাওয়েফী যায়েদ
  

এটা ভাল মিঠা
  

হাযা তাইয়েব হেলু

আপনার মদিনা শরীফে দলিল কে?
  

মিন দলীলুক ফিল মদীনা?
  

কি চান হাজী সাহেব?
  

এশ তেবগা হাজ্জি?

আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি
  

আনা ফাগাদ্তু তরীগ
  

আমি ডাক্তারখানা চাই
  

আব্গা ইয়াদা তাবীব

আমি জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ দূতাবসের রাস্তা খোঁজ করছি
  

আনা উরীদু তরীগ সাফারাতে বাংলাদেশ লাদা জেদ্দা
  

রাস্তার শেষ মাথায় ডাক্তার আছেন?
  

হাযা ফি আখেরে তরীগ

আপনি কি চান?
  

এশ তেবগা?
  

ডাক্তার আছেন?
  

তাবীব ফি?

আমি বাংলাদেশ হজ্জ মিশন অফিসে যেতে চাই
  

আবগা আন আরুহ ইলা মাকতাব বে’সাতিল হাজ্জ বাংলাদেশ
  

আছি, ভিতরে আসুন
  

ফি, তাফাদ্দাল

মক্কা শরীফের বাস স্ট্যান্ড কোথায়
  

ফিন মাওকেফ্ উতবিস্ মাক্কা
  

হাজী সাহেব কি হয়েছে?
  

মা বেকা ইয়া হাজ্জি?

বাংলাদেশ হজ্জ মিশন বাবে আব্দুল আযীযের সামনে
  

মাকতাব বে’সাতিল হাজ্জ বাংলাদেশ গুদ্দাম বাবা আব্দিল আযীয
  

ওহ্ মাথা ব্যথা!
  

আহ্ রাস!

তোমার সাথে কে?
  

মিন মা’আক
  

পেটে ভীষণ ব্যথা
  

আলাম শাদীদ ফি বাতনি

তিনি আমার বন্ধু
  

হুয়া রফীগি
  

গতরাতে কি খেয়েছিলেন?
  

মাযা আকালতা বিল বারেহা

এই কুলী, এদিকে আস
  

তা’আল ইয়া হাম্মাল!
  

রুটি ও গোশত খেয়েছিলাম
  

তানাওয়ালতু খুবজ ওয়া লাহাম

এই জিনিষগুলো উঠাও
  

শিলু হাযিহিল আশ্ইয়া
  

আমার যখম হয়েছে
  

আসাবতু বিল জুরুহ

ড্র্ভাার, তুমি কি মক্কা যাবে?
  

ইয়া সাওয়াগ, হাল তারুহ ইলা মাক্কা?
  

আমার জ্বর হয়েছে
  

আসাবতু বিল হুমমা

কত ভাড়ায়?
  

বেকাম?
  

এই ঔষধ তোমকে সুস্থ করবে
  

হাযা দাওয়া ইয়াশ্ফ্
ি
এই উটটির কত?
  

বেকাম হাযাল জামাল?
  

ঔষধ কোথায় পাব?
  

ফিন আজিদ দাওয়া?

কুরবানী করার জায়গা কোথায়?
  

ফিন মাযবাহ?
  

ফার্মেসীতে
  

ফিস্ স্য়াদালা

আমাকে যুমরার রাস্তা বলুন
  

দুল্লানী তরীগ যুমরা
  

কিভাবে সেবন করব?
  

কিফ্ আস্তামিল?

মসজিদ খাইফ কোথায়?
  

ফিন মসজিদ খাইফ ?
  

এক বড়ি দৈনিক তিনবার
  

ওয়াহেদ কুরছ তুলতু মাররা ফিল ইয়াওম

হাজী সাহেব, আসুন!
  

তাফাদ্দাল ইয়া হাজ্জি
  

একটি করে ক্যাপসুল দিনে দুই বার
  

ওয়াহেদ ক্যাবসুল মাররাতাইন ফিল ইয়াওম

ধন্যবাদ, একপ্লেট ভাত দাও
  

শুকরান, হাতে ছাহাম রুয
  

ধন্যবাদ
  

শুকরান

কি তরকারী আছে?
  

এশ, ফি ইদাম?
  

আসুন বসুন
  

আহলান সাহলান

গরুর গোশ্ত এবং মাছ দাও
  

হাতে লাহাম বাকার য়ো সামাক্
  

বাজার কোথায়?
  

ফেন সুক?

ঠান্ডা পানি দাও
  

জিবু মুইয়া সাল্লাজা
  

আমি হারাম শরীফে যেতে চাই
  

উরিদু আন আযহাবা ইলাল হারাম

দূধ আছে?
  

হালিব ফি?
  

ওহে কুলী! এদিকে এসো
  

ইয়া হাম্মাল তায়াল হেনা

দূধ নাই তবে কফি আছে
  

মা ফিল হালিব, লাকিন গাহওয়া ফি
  

আমার মালপত্র কোথায়?
  

ফেন্ আফ্শ হাগ্গী?

দাম কত হয়েছে?
  

কাম আল্ হিসাব?
  

আমি রাস্তা ভুলে গেছি
  

আনা নাসিতুত তারীক

সাড়ে পাঁচ রিয়াল
  

খামচা রিয়াল ওয়া নুছ
  

বাসষ্টান্ড ভুলে গেছি
  

ফেন্ মওকুফ সাইয়্যারা

আল্লাহ তোমর উপর রাযী থাকুন
  

আল্লাহ আরদা আলাইকা
  

আমার পাসপোর্ট কোথায়
  

আইনা জাওয়ায হাগ্গী?

আল্লাহ দীর্ঘজিবী করুন!
  

হাইয়াকুমুল্লাহ!
  

অনুগ্রহ করে ধীরে ধীরে কথা বলুন
  

তাকাল্লাম শোয়ে শোয়ে মিন ফাদলিকা

আমার সাথে আস
  

তা’আল মাইয়া
  

এই রাস্তার নাম কি?
  

মা ইসমু হাযাশ্ শারে?

তার সাথে যাও
  

রুহ্ মাআহু
  

হাঁ
  

না’য়াম

কেন দেরী করেছ?
  

লেমা তাআখ্খারতা?
  

না
  

লা

তাড়াতাড়ি আস
  

তাআল সুরআ
  

পায়খানা কোথায়
  

ফেন্ হাম্মাম

হিসাব কর
  

হাচ্ছেব
  

বিকাল ৪টা
  

আরবা আসরান

জনপ্রতি
  

আলা নফর
  

রাত ৯টা
  

তিস্আ লায়লান

কত জন?
  

কাম নফর?
  

আল্লাহ হাফেজ
  

মা’আস্ সালাম

সবচেয়ে ভাল মাল দেখাও
  

আ-রেনী আহসান এন্দাক
  

আবার দেখা হবে
  

ইলাল লিকা

ক’টা বেজেছে
  

কাম সা’য়া
      

সকাল ১০ টা
  

আশারা সাবাহান
      
          
          
          
          

























































  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম





 বাণী



মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে লাখো-কোটি শুকরিয়া আদায় করছি যার অশেষ মেহেরবানীতে  “সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড” এর উদ্যোগে বাইতুল্লাহ শরীফ যিয়ারতকারী আল্লাহর মেহমানদের জন্য “যিয়ারতে বাইতুল্লাহ” শীর্ষক গ্রন্থটি প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে ।



ইসলামের মৌলিক পাঁচটি রুকনের মধ্যে হজ্জ একটি অন্যতম রুকন। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন ” মানুষের মধ্যে যার সেখানে (পবিত্র কাবাগৃহে) যাওয়ার সামর্থ্য আছে,আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ্জ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য” (সূরা আলে-ইমরান- ৯৭)। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী অনুসারে জান্নাতই হচ্ছে হজ্জে মাবরুর এর একমাত্র প্রতিদান। অন্যদিকে  হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলিয়াছেন “যে ব্যক্তি হজ্জ এর সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও হজ্জ পরিত্যাগ করলো, এমন ব্যক্তির মৃত্যু হবে ইহুদী বা খৃষ্টানের মতই” (তিরমিযী)। এজন্য যার উপর হজ্জ ফরজ হয়েছে তার উচিৎ কালবিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব হজ্জ আদায় করা।



আর্থিক কোরবাণী এবং অক্লান্ত শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে হজ্জ ও উমরা আদায়ের পরেও যথাযথ নিয়ম নীতি ও পদ্ধতি না জানার কারনে অনেকের পক্ষেই  হজ্জের ফরজ,ওয়াজিব ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী সাহীহ ভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয়না। তাই হজ্জের আবশ্যকীয় মাসআলাসমুহ জানা প্রত্যেক হজ্জযাত্রীর জন্য অতীব জরুরী । আমাদের দেশের অধিকাংশ হাজীগণ হজ্জ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অনেক সময় হজ্জের বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদীর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিভ্রান্তিতে পড়েন। সেক্ষেত্রে এ বইটিতে বিভিন্ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে হজ্জ ও উমরাহ  সহীহভাবে সম্পন্ন করার নিয়মাবলী ধারাবাহিকভাবে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। আমি আশা করি হজ্জ সম্পর্কিত মৌলিক ও অপরিহার্য মাসআলাগুলো জানার ক্ষেত্রে  ”যিয়ারতে বাইতুল্লাহ” বইটি সম্মানিত হাজীদের যথেষ্ঠ সহায়তা করবে।



পরিশেষে এ গ্রন্থ সংকলন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে যারা শ্রম, মেধা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট তাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের এই প্রচেষ্টাকে ইহকালীন উন্নতি ও পরকালীন নাজাতের উপায় হিসেবে কবুল করুন।

আমীন।









  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বাণী





আল্লাহর বাণী  “তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর” (সুরা আল বাকারা, আায়াত- ১৯২)।

হজ্জ ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা হিজরী ৮ম সন থেকে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর ওপর হজ্জ ফরজ করেছেন। নামাজ রোজার মতই হজ্জ একটি ফরজ ইবাদত। প্রত্যেক আল্লাহপ্রেমিক মুমিনের জীবনের পরম আকাক্সক্ষা হলো পবিত্র হজ্জব্রত পালন করা। কারন আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম হল হজ্জ।  হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন আমল সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোন কাজটি সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোন আমল সবচাইতে উত্তম? তিনি বললেন, ‘হজ্জে মাবরুর’ অর্থাৎ ত্র“টিমুক্ত হজ্জ। (বুখারী ও মুসলিম)



হজ্জ এমন একটি ইবাদত যেখানে একজন মুমিনের শারীরিক,মানসিক ও আর্থিক ইবাদতের সমন্বয় ঘটে। একই সাথে তার মন-মানসিকতা ও চরিত্রের সংশোধন এবং আধ্যাতিœক উন্নতির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। মুমিনগণ গুনাহসমুহ মোচনের সুযোগ পায়। “হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং হজ্জ পালনকালে কোন ধরনের অশালীন কথা ও কাজে কিংবা কোন গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়নি, সে যেন নবজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করল”(বুখারী ও মুসলিম)। বনী-আদম সর্বদাই বিভিন্ন ভূলত্র“টি ও গুনাহের মধ্যে নিপতিত। মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে বান্দার গুনাহ মাফ করানোর একটি অনন্য ইবাদত হল হজ্জ । উল্লেখ্য অন্যান্য ইবাদতের মত হজ্জের  জন্যও রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু আহকাম ও আরকান। তাই শুদ্ধভাবে হজ্জ পালন করতে হলে হজ্জের এসব আহকাম-আরকান সর্ম্পকে স্বচ্ছ ও পর্যাপ্ত ধারণা থাকা অপরিহার্য। ভূল-ভ্রান্তির কারনে সহীহভাবে হজ্জ আদায় না হলে এ ভুল শুধরানোর সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে।



সম্মানিত হাজ্জীগনকে হজ্জের জরুরী আহকাম আরকানগুলো সর্ম্পকে পরিচ্ছন্ন ধারণা দেওয়ার সুন্দর প্রয়াস নিয়ে “সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড” এর উদ্যোগে প্রকাশিত হল  “যিয়ারতে বাইতুল্লাহ” শীর্ষক গ্রন্থটি। হজ্জ ও উমরার প্রয়োজনীয় বিধি বিধান এবং দুআ সমূহ বইটিতে স্থান পেয়েছে। তাই সহজে ও সংক্ষেপে হজ্জ এবং উমরার বিধি-বিধানগুলো আয়ত্বে আনার জন্য বইটি সহায়ক হবে এবং সম্মানিত হাজ্জীগণ অত্র গ্রন্থ থেকে যথেষ্ট উপকৃত হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।



পরিশেষে গ্রন্থটি সংকলন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে যারা শ্রম, মেধা, মননশীলতা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে উত্তম পুরস্কার প্রদান করুন সেই প্রার্থনা করি।























“যিয়ারতে বাইতুল্লাহ”





সম্পাদনায়

এ.এম.এম.ফরহাদ

উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসআইবিএল

সৈয়দ জয়নুল আবেদীন

মুরাকিব, এসআইবিএল





প্রকাশকাল

২০১৩ইং



গ্রন্থস্বত্ব

শরীআহ সুপারভাইজরী কমিটি সেক্রেটারিয়েট

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড



প্রকাশনায়







সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড

প্রধান কার্যালয়

৯০/১, মতিঝিল বা/এ,

সিটি সেন্টার, ঢাকা-১০০০।








No comments:

Post a Comment